পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y88 বিভূতি-রচনাবলী যান । আবার রাণাঘাটে যখন আপনার হোটেলে যাব, তখন আপনি আমায় খাওয়াবেন । হাজারি জানে এ অঞ্চলের এই রকমই নিয়ম বটে। ব্যবসাদার লোকদের পরস্পরের মধ্যে যথেষ্ট সহাহভূতি ও খাতির এখনও এই সব পাড়াগ অঞ্চলে আছে। রাণাঘাটের মত শহর জায়গায় রেষারেষির আবহাওয়ায় উহা নষ্ট হইয়া গিয়াছে। রাত্রে দোকানী বেশ ভাল খাওয়া-দাওয়ার যোগাড় করিয়া দিল। ঘি ময়দা আনিয়া দিল, লুচি ভাজিয়া খাইতে হইবে, হাজারির কোনো আপত্তিই টিকিল না । ছোট একটা রুই মাছ কোথা হইতে আনিয়া হাজির করিল। টাটকা পটল, বেগুন, প্রায় আধ সের ঘন দুধ, বেলের বাজারের উৎকৃষ্ট কাচাগোল্লা সন্দেশ । হাজারি দস্তুরমত লজ্জিত ও অপ্রতিভ হইয়া পড়িল । এমন জানিলে সে এখানে আসিত না । মিছামিছি বেচারীর দণ্ড করা, অথচ সে-কথা বলিতে গেলে লোকটি মহা দুঃখিত হইবে। এই ধরনের নি:স্বার্থ আতিথেয়তা শহর-বাজারে হাজারির চোখে পড়ে নাই—এই সব পল্পী-অঞ্চলেই এখনও ইহা আছে, হয়তে দু-দশ বছর পরে আর থাকিবে না । পরদিন সকালে হাজারি দোকানীর নিকট বিদায় লইল বটে, কিন্তু রাণাঘাট না আসিয়া ইটোপথে গোপালনগর চলিল। তাহার পুরানো মনিব-বাড়ী, সেখানে তাহার একটা কাপড়ের পুটুলি আজও পড়িয়া আছে—আনি আনি করিয়া আনা আর হইয় উঠে নাই । পথে বেলা চড়িল । পথের ধারে বনজঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট পুকুরটি দেখিয়া হাজারির মনে পড়িল ইহারই কাছে শ্ৰীনগর সিমূলে গ্রাম। হাজারি গ্রামের মধ্যে ঢুকিল, তাহার বড় হচ্ছা হইল সেবার যাহার বাড়ীতে আশ্রয় লইয়াছিল, সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করিয়। তবে যাইবে । অনেক দিন পরে যখন এ পথে আসিয়াছে, তখন তাহার সংবাদ লওয়াটা দরকার বটে। বিহারী বাড়ধ্যে মশায় বাড়ীতেই ছিলেন। এই দুই বৎসরে চেহারা তাহার আরও ম্যালেরিয়াশীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে, মাথার চুল সবগুলি পাকিয়া গিয়াছে, সম্মুখের দু-একটি দাত পড়িয়াছে। বড় যে মশায় হাজারিকে দেখিয়া চিনিতে পারলেন, গ্রাম্য আতিথেয়তার কোনো ক্রটি হইল না—তখনই হাত-পা ধুইবার জল আনিয়া দিলেন এবং এ-বেলা অন্ততঃ থাকিয়া আহার না করিয়া তাহার যে যাইবার উপায় নাই এ-কথাটিও হাজারিকে জানাইয়া দিলেন। বাড়ীর সন্মুখস্থ নারিকেল গাছে ডাব পাড়িবার জন্ত তখনই লোক উঠাইবার ব্যবস্থা করিলেন । গ্রামে তখনই লোক ছিল না তত, এ দু-বছরে ধেন আরও জনশূন্ত হইয়া পড়িয়াছে।