পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ বিভূতি-রচনাবলী হইবে। সংসারে উন্নতি করিতে হইলে, দেশের কাছে বড় মুখ দেখাইতে হইলে, পরের মুখে নিজের নাম শুনিতে হইলে—সেজন্য চেষ্টা চাই, খাটুনি চাই। আডডা দিয়া গাজা খাইয়া বেড়াইলে কিংবা মতি চাকরের মত ছোট বাজারের বারোয়ারীর যাত্রা শুনিয়া বেড়াইলে কি হইবে ? রাত অনেক। মাথা গরম হইয়া গিয়াছে। ঘুম আসার নামটি নাই। দরজায় খটখট শব্দ হইল। হাজারি উঠিয়া দরজা খুলিল—সে আগেই বুঝিয়াছিল মতি চাকর ফিরিয়াছে। মতি ঘরে ঢুকিয়া বলিল—এখনো ঘুমোওনি ঠাকুর । এখনো জেগে বে। হাজারি গাজার কলিকা লুকাইয়া রাখিয়া তবে মতিকে দরজা খুলিয়া দিতে গিয়াছিল। বলিল—ষে গরম, ঘুম আসবে কি, সারাদিন আগুনের তাতে—যাত্রা দেখলি নে ? মতি বলিল—যাত্রার আসরে জায়গা নেই। লোক ভৰ্ত্তি। ফিরে এলাম। চল এক জায়গায়, যাবে ঠাকুরমশায় ? —কোথায় ? —পাড়ার মধ্যে। চলো না—ঘুম যখন নেই, একটু ঘুরেই না হয় এলে। তোমার তো কোনদিন কোথাও— হাজারি বলিল—তোরা ছেলে-ছোকরা, আমার বয়স ছে’চল্লিশ । আমি তোর বাপের বয়সের মানুষ, আমার সঙ্গে ও-সব কথা কেন ?-“তোর ইচ্ছে, যা বুঝিস করগে যা। —বাবুর কাছে কি পদ্মদিদির কাছে কিছু ব'লো না ঠাকুরমশাই, দোহাই, দুটি পায়ে পড়ি। আশ্চৰ্য্য এই যে, মতির এই কথা হাজারির মনে এক নতুন ধরনের ভাবনা আনিয়া দিল। তাহার উচ্চাশা আছে, মতির মত রাত বেড়াইয়া স্মৃত্তি করিয়া সময় নষ্ট করিলে ভগবান তাহাকে দয়া করিবেন না । মতি কি ভাবিয়া আর বাহিরে গেল না, বাসনের ঘরে ( হোটেলের পিতল কাসার থালা-বাটি রান্নাঘরের পাশে সিন্দুকে থাকে, মাজাঘষার পর রোজ রাত্রে বেচু চকত্তি নিজে দাড়াইয়া থাকিয়া সেগুলি গুনিয়া সিন্দুকে তুলিয়া রাখিয়া চাবি নিজে সঙ্গে করিয়া লইয়া যান ) গিয়া শুইয়া পড়িল । হাজারিও বাসনের ঘরে শোয়, আজ সে বাহিরের গদির মেজেতে তাহার পুরোনো মাদুরখানা পাতিয়া শুইল । না—ঘন্ধুবাবুর হোটেলে সে যাইবে না। হোটেলের রাধুনিগিরি সব জায়গায় সমান। এ হোটেলে আছে পদ্ম, ও হোটেলে হয়তো আবার কে আছে কে জানে ? তা ছাড়া, বেচুবাবু তাহার পাঁচ বছরের অন্নদাতা। লোভে পড়িয়া এতদিনের অন্নদাতাকে ত্যাগ করিয়া যাওয়া ঠিক নয় । সে নিজে হোটেলে খুলিবে, এই তো তাহার লক্ষ্য। রাধুনি-বিত্তি যতদিন করিতে হয়, এই হোটেলেই করিবে। অন্য কোথাও যাইবে না। তাহার পর রাধাবল্লভ দয়া করেন, তখন অন্য কথা ।