পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল סצ পরদিন খুব সকালে পদ্ম ঝি আসিয়া ডাকিল—ও ঠাকুর, দোর খোল—এখনও ঘুম— বাবা: ! কুম্ভকৰ্ণকে হাব মানালে তোমরা ! হাজারি তাড়াতাড়ি বিছানা হইতে উঠিয়া ছেড়া মাছরখানা গুটাইয়া রাখিয়া দোর খুলিয়া দিল। একটু পরেই বেচু চকত্তি আসিলেন। দরজায়, গদিতে ও ক্যাশ-বাক্সে গঙ্গা জলের ছিটা দিয়া, ক্যাশ-বাক্সের ডালায় উপরটা সামান্ত একটু গঙ্গাজল দিয়া মার্জনা করিয়া লইয়া পদ্ম ঝিকে বলিলেন—ধুনো দে-বেলা হয়ে গেল। আজ হাটবার, ব্যাপারীদের ভিড় আছে, শীগগির ক’রে আঁচ দে—আর সেদিনকার মত পচা দই-টই আনিস নে বাপু । ওতে নাম খারাপ হয়ে যায়—শেষকালে স্যানিটারি বাবুর চোখে পড়ে যাবো। দরকার কি ? ব্যাপারীরা সাধারণত: পাড়াগায়ের চাষা লোক। তাহারা দুই খাইতে পছন্দ করে বলিয়া প্রতি হাটবারে তাহীদের জন্য কয়েক হাড়ি দইয়ের বরাদ্ধ আছে। এই দুই পদ্ম ঝি তাহার নিজের ঘরে পাতিয়া হোটেলে বিক্রয় করিয়া দুই পয়সা লাভ করিয়া থাকে। এবং সে যে প্রথম শ্রেণীর জিনিস সরবরাহ করে না, তাহ বলাই বাহুল্য। পদ্ম বি মুখ ঘুরাইয়া বলিল—বাবু আপনার যত সব অনাছিষ্ট কথা! দুই পচা না ঘণ্ট, কে বলচে দই পচা ! ওই মুখপোড়া হাজারি ঠাকুর তো ? ওর ছেরাদ্ধর চাল যদি আজ— হাজারি ঠাকুর কথাটা বলিয়াছিল বটে—তবে সে দই পচা কি তাজা তাহা বলে নাই— বলিয়াছিল ব্যাপারী খদেররা বলাবলি করিতেছিল এ রকম খারাপ দুই খাইতে দিলে তাহারা চোদ পয়সার জায়গায় বারো পয়সার বেশি খোরাকি দিবে না । পদ্ম ঝি রান্নাঘরের চৌকাঠে পা দিয়া বাজালে ঝগড়ার স্বরে বলিল—বলি, ও ঠাকুর,— দই পচা তোমাকে কে বলেচে ? হাজারি আমতা আমতা করিয়া বলিল—ওই সাধু মণ্ডল আর তার ভাইপো রোজ হাটেই তো এখানে খায়—ওরাই বলছিল— —বলছিল! তোমার গলা ধরে বলতে গিয়েছে ওরা। তোমার মত হিংসুক কুচুটে লোক তো কখনো দেখিনি—আমি দুই দিই ব’লে তুমি হিংসেয় বুক ফেটে মরে যাচ্চ সে কি আমি বুঝিনে ! তোমার শখের কুসুম গয়লানীর ছাপ-বাক্সে পয়সা না উঠলে কি আর তোমার মনে শাস্তি আছে!”গাঁজাখোর মড় ই-পোড়া বামুন কোথাকার । হাজারি জিভ, কাটিয়া বলিল—ছি ছি, কি যে বলে পদ্মদিদি তার ঠিক নেই—কুস্কমের বাপের বাড়ী আমাদের গায়ে, আমায় জ্যাঠা ব'লে ডাকে, আমি তাকে মেয়ে বলি—তার নামে আমন কথা বল্পে তোমার পাপ হবে না 7 • ইহার উত্তরে পদ্ম ঝি যাহা বলিল, তাহা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা যায় না। হাজারির চোখে প্রায় জল আপিল। কুমমকে সে সত্যই মেয়ের মত স্নেহ করে— তাহাজের গ্রামের রসিকলাল ঘোষের মেয়ে—রাণাঘাটে তার শ্বশুরবাড়ী—অল্পবয়সে বিধবা হইয়াছে, এখন দুধ বেচিয়া, দই বেচিয়া ছোট ছোট দুইটি ছেলেকে মানুষ করে। এক শাশুড়ী ছাড়া শ্বশুরবাড়ীতে কেহ নাই ।