পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল ^ 3 আসিবে ( সে ব্রাহ্মণের বিধবা নয়, মাছ-মাংস খাইতে তাহার আপত্তি নাই ) ভাবিয়া ডেকৃচিতে দেড় পোয়া আন্দাজ মাংস হাজারি রাশিয়া দিয়াছিল—পদ্ম ঝি কি তাহা দেখিতে পাইল ? পদ্ম দেখিয়াছে বুঝিয়া হাজারি বলিল--সামান্ত একটু আছে। —কি হবে ওটুকু ? আমায় দাও না—আমার আজ ভাল্পীজামাই আসবে—তুমি ত মাংস খাও না— কুমুমের জন্য রাখা মাংস পদ্ম বিকে দিতে হইবে—যার মুখ দেখিতে ইচ্ছা করে ন৷ হাজারির | হাজারি মাংস খায় না তাহা নয়, হোটেলে মাংস রান্না হইলেই হাজারি নিজের ভাগের মাংস লুকাইয়া কুস্কমকে দিয়া আসে—নিজেকে বঞ্চিত করিয়া। পদ্ম ঝি তাহা জানে, জানে বলিয়াই তাহাকে আঘাত করিয়া প্রতিশোধ লইবার ইচ্ছ। উহার মনে জাগিয়াছে ইহাও হাজারি বুঝিল । হাজারি বলিল—তোমায় তো দিলাম পদ্মদিদি, একটুখানি পড়ে আছে ডেকৃচির তলায়— ওটুকু আর তুমি কি করবে ? —কি করবে বললুম, তা তোমার কানে গেল না ? ভাগ্নীজামাই এসেছে শুনলে না ? ষা দিলে এতটুকুতে কি কুলুবে ? ঢেলে দাও ওটুকু। হাজারি বিপন্ন মুখে বলিল—আমি একটু রেখে দিইছি, আমার দরকার আছে। পদ্ম বি ঘুরিয়া দাড়াইয়া শ্লেষের স্বরে বলিল—কি দরকার ? তুমি তো খাও না-কাকে দেবে শুনি ? হাজারি বলিল—দেবো—ও একজন একটু চেয়েছে— —-কে একজন ? —আছে-—ও সে তুমি জানো না। পদ্ম ঝি ভাতের থালা নামাইয়া হাত নাড়িয়া বলিল—না, আমি জানিনে। তা কি আর জানি ? আর সে জানা-জানির আমার দরকার নেই। হোটেলের জিনিস তুমি কাউকে দিতে পারবে না, তোমায় অনেকদিন বলে দিইছি। বেশ তুমি আমায় না দাও, চকত্তি মশায়ের শালাও আজ কলকাতা থেকে এসেছে—তার জন্যে মাংস বাটি ক’রে আলাদা রেখে দাও—ওবেলা এসে খাবে এখন । আমি না পেতে পারি, সে হোটেলের মালিকের আপনার লোক, সে তো পেতে পারে ? বেচু চকত্তির এই শালাটিকে হাজারি অনেকবার দেখিয়াছে—মাসের মধ্যে দশ দিন আসিয়া ভগ্নীপতির বাড়ী পড়িয়া থাকে, আর কালাপেড়ে ধুতি পরিয়া টেরি কাটিয়া হোটেলে আসিয়া সকলের উপর কর্তৃত্ব চালায়—কথায় কথায় ঠাকুর-চাকরকে অপমান করে ; চোখ রাঙায়, যেন হোটেলের মালিক নিজেই । তাহাদের গ্রামের মেয়ে, দরিদ্রা কুষম ভালটা মন্দটা খাইতে পাওয়া দূরে থাকুক, অনেক সময় পেটের ভাত দুটাইতে পারে নী—তাহার জন্ত রাখিয়া দেওয়া এত ঘত্বের মাংস শেষকালে