পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8 বিভূতি-রচনাবলী মহাদেব ঘোষালের বাড়ীতে খাবার স্বাবে, তারা অর্ডার দিয়ে গেছে সাড়ে ন’টার মধ্যে চাই, বুঝলে ? হাজারি ঠাকুর অবাক হইয়া বলিল-সাড়ে ন’টার মধ্যে ওই আধ মণ ময়দা ভেজে পাঠিয়ে দেবে, আবার হোটেলের রান্না রাধবো ! কি যে বল পদ্মদিদি, তা কি ক’রে হবে ? রতন ঠাকুরকে বল না লুচি ভেজে দিক, আমি হোটেলের রান্না রাধবো। পদ্ম ঝি চোখ রাঙাইয়া ছাড়া কথা বলে না । সে গরম হইয়া ঝঙ্কার দিয়া-বলিল— তোমার ইচ্ছে বা খুশিতে এখানকার কাজ চলবে না। কৰ্ত্ত মশায়ের হুকুম । আমায় বা বলে গেছেন তোমায় বললাম, তিনি বড় বাজারে বেরিয়ে গেলেন—আসতে রাত হবে। এখন তোমার মজ্জি—করে আর না করে । অর্থাৎ না করিয়া উপায় নাই। কিন্তু ইহাদের এই অবিচারে হাজারির চোখে প্রায় জল আসিল । নিছক অবিচার ছাড়া ইহা অন্য কিছু নহে। রতন ঠাকুরকে দিয়া ইহারা সাধারণ রান্না অনায়াসেই করাইতে পারিত, কিন্তু পদ্ম ঝি তাহা হইলে খুশি হইবে না। সে যে কি বিষ-চক্ষে পড়িয়াছে পদ্ম ঝিয়ের । উহাকে জস্ব করিবার কোনো ফাকই পদ্ম ছাড়ে না। ভীষণ আগুনের তাতের মধ্যে বসিয়া রতন ঠাকুরের সঙ্গে দৈনিক রান্না কাৰ্য্যেতেই প্রায় ন’টা বাজিয়া গেল। পদ্ম ঝি তাহার পর ভীষণ তাগাদা লাগাইল লুচি ভাজাতে হাত দিবার জন্য। পদ্ম নিজে খাটিতে রাজি নয়, সে গেল খরিদ্ধারদের খাওয়ার তদারক করিতে। আজ আবার হাটবার, বহু ব্যাপারী খরিদার। রতন ঠাকুর তাহদের পরিবেশন করিতে লাগিল। .হাজারি এক ছিলিম তামাক খাইয়া লইয়াই আবার আগুনের তাতে বসিয়া গেল লুচি ভাজিতে । আধঘণ্টা পরে—তখন পাঁচ সের ময়দাও ভাজা হয় নাই–পদ্ম আসিয়া বলিল—ও ঠাকুর, লুচি হয়েচে ? ওদের লোক এসেছে নিতে । হাজারি বলিল—না এখনো হয়নি পদ্মদিদি। একটু ঘুরে আসতে বল। —ঘুরে আসতে বললে চলবে কেন ? সাড়ে ন’টার মধ্যে ওদের খাবার তৈরি ক’রে রাখতে হবে বলে গেছে । তোমায় বলিনি সেকথা ? —বল্পে কি হবে পদ্মদিদি ? মস্তরে ভাজা হবে অাধ মণ ময়দা ? ন’টার সময় তো উকুনে ব্ৰহ্মার নেচি ফেলেচি—জিগ্যেস করে মতিকে । —সে সব আমি জানিনে। যদি ওরা অর্ডার ফেরত দেয়, বোঝাপড়া ক'রে কর্তার সঙ্গে, তোমার মাইনে থেকে আধ মন ময়দা আর দশ সের বির দাম একমাসে তো উঠবে না, তিন মাসে ওঠাতে হবে। হাজারি দেখিল, কথা কাটাকাটি করিয়া লাভ নাই। সে নীরবে লুচি ভাজিয়া বাইতে লাগিল। হাজারি ফাকি দেওয়া অভ্যাস করে নাই—কাজ করিতে বসিয়া শুধু ভাবে কাজ কৰিয়া ৰাওয়াই তাহার নিয়ম—কেউ দেখুক বা না-ই দেখুক। লুচি ধিয়ে ডুবাইয়া