পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ বিভূতি-রচনাবলী ভাজতে। তুমি বেলবার লোক দাও। পদ্ম কি মুখ নাড়িয়া বলিল—আমি ভাড়া ক’রে জানি বেলবার লোক তোমার জন্তে । ও আমার বাবু রে । ভাজতে হয় ভাজে, না হয় না ভাজো গে—ফেরত গেলে তখন কর্তামশায় তোমার সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন এখন । পদ্ম ঝি চলিয়া গেল । মতি চাকর বলিল—ঠাকুর, তুমি লুচি ভেজে উঠতে পারবে কি ক’রে । লুচি পোড়াবে না । এত ময়দার তাল আমি বেলবো কখন বলে । হঠাৎ হাজারির মনে হইল, একজন মানুষ এখনি তাহাকে সাহায্য করিতে বসিয়া যাইত— কুমম! কিন্তু সে গৃহস্থের মেয়ে, গৃহস্থের ঘরের বেী—তাহাকে তো এখানে আনা যায় না। যদিও ইহা ঠিক, খবর পাঠাইয়া তাহার বিপদ জানাইলে কুস্কম এখনি ছুটিয়া আসিত। তারপর একঘণ্টা হাজারি অন্য কিছু ভাবে নাই, কিছু দেখে নাই—দেখিয়াছে শুধু লুচির কড়া, ফুটন্ত ঘি, ময়দার তাল আর বাখারির সরু আগায় ভাজিয়া তোলা রাঙ্গ রাঙ্গা লুচির গোছ—তাহা হইতে গরম ঘি ঝরিয়া পড়িতেছে। ভীষণ আগুনের তাত, মাজা পিঠ বিষম টনটন করিতেছে, ঘাম ঝরিয়া কাপড় ও গামছা ভিজিয়া গিয়াছে, এক ছিলিম তামাক খাইবারও অবকাশ নাই—শুধু কাচ লুচি কড়ায় ফেলা এবং ভাজিয়া তুলিয়া ঘি ঝরাইয়া পাশের ধামাতে রাখা । রাত দশটা ৷ মুর্শিদাবাদের গাড়ী আসিবার সময় হইল। মতি চাকর বলিল-আমি একবার ইষ্টিশনে যাই ঠাকুরমশায় । টেরেনের টাইম হয়েচে । খন্ধের না আনলে কাল কৰ্ত্তামশায়ের কাছে মার খেতে হবে। একটা বিড়ি থেয়ে ঘাই । ঠিক কথা, সে খানিকক্ষণ প্লাটফর্শ্বে পায়চারি করিতে করিতে 'হি-ই-ই-দু হোটেল' "হি-ই-ই-দু হোটেল’ বলিয়া চেঁচাইবে। মুর্শিদাবাদের ট্রেন আসিতে আর মিনিট পনেরো यांकौ । হাজারি বলিল—এক আমি বেলবে। আর ভাজবো। তুই কি খেপলি মতি দেখলি তো এদের কাও । রতনঠাকুর সরে পড়েছে, পদ্মদিদিও বোধ হয় সরে পড়েছে। আমি এক কি করি ? মতি বলিল—তোমাকে পদ্মদিদি ছুচোখে দেখতে পারে না। কারো কাছে বোলো না ঠাকুর—এ সব তারই কারসাজি । তোমাকে জব্দ করবার মতলবে এ কাজ করেচে। আমি যাই, নইলে আমার চাকরি থাকবে না। 啦 মতি চলিয়া গেল। অন্ততঃ পাঁচ সের ময়দার তাল তখনও বাকী। লেচি পাকানো সে-ও প্রায় দেড় সের—হাজারি গুণিয়া দেখিল ষোল গণ্ড লেচি। অসম্ভব । একজন মানুষের দ্বারা কি করিয়া রাত বারোটার কমে বেলা এবং ভাজা স্কুই কাজ হইতে পারে । মতি চলিয়া ৰাইবার সময় যে বিড়িটা দিয়া গিয়াছিল সেটি তখনও ফুরায় নাই—এমন সময়