পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२bv বিভূতি-রচনাবলী এখনও তিন চার ঝুড়ি লুচি মজুত । পদ্ম কি উকি মারিয়া বলিল—লুচি ভাজচো এখনও বসে ? আমাকে খানকতক দাও জিকি— ৰলিয়া নিজেই একখানা গামছা পাতিয়া নিজের হাতে খান পচিশ-ত্রিশ গরম লুচি তুলিয়া লইল। হাজারি মুখ ফুটিয়া বারণ করিতে পারিল না। সাহসে কুলাইল না। இ. অনেক রাত্রে স্বপ্তোথিত কুহুম চোখ মুছিতে মুছিতে বাহিরের দরজা খুলিয়া সম্মুখে মন্ত এক পোটুলা-হাতে-ঝোলানে অবস্থায় হাজারি ঠাকুরকে দেখিয়া বিস্ময়ের স্বরে বলিল—কি বাবাঠাকুর, কি মনে ক’রে এত রাত্রে ?••• হাজারি বলিল—এতে লুচি আছে মা কুহম। হোটেলে লুচি ভাজতে দিয়েছিল খদ্দেরে । বেলে দেবার লোক নেই—শেষকালে খদ্ধের পাঁচ সের ময়দার লুচি নিলে না, কর্তাবাবু বলেন আমায় তার দাম দিতে হবে। বেশ আমায় দাম দিতে হয় আমিই নিয়ে নিই। তাই তোমার জন্তে বলি নিয়ে যাই, কুস্কমকে তো কিছু দেওয়া হয় না কখনো । রাত বডড হয়ে গিয়েচে— ঘুমিয়েছিলে বুঝি ? ধর তো মা বোচকাটা রাখো গে ধাও। কুস্কম বোচকাটা হাজারির হাত হইতে নামাইয়া লইল । সে একটু অবাক হইয়া গিয়াছে, বাবাঠাকুর পাগল, নতুবা এত রাত্রে—(তাহার এক ঘুম হইয়া গিয়াছে—), এখন আসিয়াছে লুচির বেচৰা লইয়া। হাজারি বলিল, আমি যাই মা—লুচি গরম আর টাটুক, এই ভেজে তুলিনি। তুমি খানকতক খেয়ে ফেলো গিয়ে এখনি । কাল সকালে বাসি হয়ে যাবে। আর ছেলেপিলেদের দাও গিয়ে। কত আর রাত হয়েচে—সাড়ে বারোটার বেশী নয়। হোটেলে ফিরিয়া হাজারি ঠাকুর একটি দুঃসাহসের কাজ করিল। মতি চাকর পূৰ্ব্ব হইতেই ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। তাহাকে তুলিয়া বলিল—মতি, আমি রাত তিনটের গাড়ীতে বাড়ী যাচ্চি। এত লুচি কি হবে, বাড়ীতে দিয়ে আসি । তুমি থাকে, আমি কাল সকাল দশটার গাড়ীতে এসে রান্না করবে, কর্তী মশায়কে বলো । মতি অবাক লইয়া বলিল—এত রাত্রে লুচি নিয়ে বাড়ী রওনা হবে – —এত লুচি কি হবে ? এখানে থাকলে কাল সকালে বারোভূতে খাবে তো। আমার জিনিস নিজের বাড়ী দিয়ে আসি। আমার বাড়ীতে ছেলেমেয়ে আছে, তারা খেতে পায় না, তাদের দিয়ে আসি । ছ’টা পয়সা তো খরচ । 登 হাজারি আর ঘুমাইল না। টেপির জন্ত তার মন-কেমন করিয়া উঠিয়াছে। কুহুম যেমন, টেপিও তেমন । আরও ছ’টি ছেলে আছে ছোট ছোট। তাদের মুখ বঞ্চিত করিয়া এত লুচি এখানে রাখিয়া পদ্ম ঝি আর কৰ্ত্তামশায়ের বাড়ীতে খাওয়াইয়া কোন লাত নাই।