পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\2) ο বিভূতি-রচনাবলী —ই্যা । সেখান থেকেই তো এলাম । —আমাদের কুম্বমের সঙ্গে দেখা-টেখা হয় ? হাজারি পাড়াগায়ের লোক, এখানকার লোকের ধাত চেনে। কুস্কমের সঙ্গে সৰ্ব্বদা দেখাশোনা বা তাদের মধ্যে পরম্পরের প্রতি টানের কোন পরিচয় সে এখানে দিতে চায় না। ইহাৱা হয়তো সহজ ভাবে সেটা গ্রহণ করিতে পারিবে না। গ্রামে কথাটা রাষ্ট্র হইয়া গেলে লোকে নানারূপ কদৰ্থ টানিয়া বাহির করিবার চেষ্টা করিবে তাহা হইতে। স্বতরাং সে বলিল —ই্যl,—দু-একবার হয়েছিল । ভাল আছে ! —এবার যদি দেখা হয়, একবার আসতে বলবেন ইদিকে । তার গায়ে আসবার দিকে তত টান নেই, শহরে দুধ বেচে চালানো যে কি মিষ্টি লেগেছে ! হাজারি কথার গতি অন্ত দিকে ঘুরাইবার উদ্বেপ্তে বলিল—এবার অাবাদপত্র কি রকম হোল বল ? —ধানের আবাদ করিচি বারো বিধে আর বাকী সব তরকারি। কুমড়ো ছ-বিঘে, আলু, পেয়াজ,—ত এবার আকাশের অবস্থা ভাল না বাবাঠাকুর, ক্ষেতে মাটি ফেটে যাচ্চে ! তরকারির কথায় হাজারির নিজের গোপনীয় উচ্চাশার কথা মনে পড়িল । তরকারি তাহার গ্রাম হইতে কিনিলে রাণাঘাট বাজারের চেয়ে অনেক স্ববিধা পাওয়া যায়। এখান হইতেই সে আনাজপত্র লইয়া যাইবে । হরি ঘোষকে বলিল—আচ্ছ, তোমাদের আলু ক’মণ হ’তে পারে ? —বাবাঠাকুর তার কি কোন ঠিক আছে ? তবে ত্রিশ-চল্লিশ মণ খুব হবে। —তুমি সমস্ত আলু আমায় দিতে পারবে । নগদ দাম দেবে। হরি ঘোষ কৌতুহলের সহিত জিজ্ঞাসা করিল—বাবাঠাকুর, আজকাল কাচামালের ব্যবসা করচেন নাকি ? —ব্যবসা এখনও করিনি, তবে করবো ভাবচি। সে তোমায় বলব একদিন । গোয়ালপাড়া হইতে আসিবার পথে একটা খুব বড় বাশবনের মাঝখান দিয়া পথ। এখানে লোকজন নাই, এড়োশোলী গ্রামেই লোকজনের বলত নাই। আগে ছিল—ম্যালেরিয়ায় মরিয়া হাজিয়া লোকশূন্ত হইয়া পড়িয়াছে। শুধুই বড় বড় আম-কঁঠালের বাগান ও বাশবনের জঙ্গল। এই বঁাশবনের মধ্যে পুরোনো দিলে পালিত পাড়া ছিল, হাজারি বাল্যকালেও দেখিয়াছে। পালিতেরা বেশ বদ্ধিষ্ণু ছিল গ্রামের মধ্যে, পূজাপাৰ্ব্বণ, দোল-দুর্গোৎসব পর্ষ্যস্ত হইয়াছে রাজেন পালিতের বাড়ী। এখন জঙ্গলের মধ্যে পালিতদের ভিটাটা পড়িয়া আছে এই পৰ্য্যন্ত । দিনমানেই বোধ হয় বাঘ লুকাইয়া থাকে। বঁাশঝাড়ে কট-কট করিয়া শুকনে বঁাশের শব্দ হইতেছে—ম্বন ছায়া, শুকনো বঁাশপাতার ও সোলার শব্দ। ফিঙ্গে, শালিখ পার্থীর কলরব । হাজারির মনে হইল, আজ যেন তার হোটেলের দাসত্ব-জীবন গতে মুক্তির দিন। সেই ভীষণ গরম উন্থনের সামনে ৰসিয়া আজ আর তাকে ডেকৃচিতে ভাত-ডাল রান্না করিতে হইবে না। পদ্ম বিয়ের কড়া তাগাছা ও