পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবর্তন মেয়েটি র্তাহাকে কোন প্রশ্ন করে না, নিজে হইতেও কোনও কথা বলে না ; কিন্তু তাহার প্রশ্নের উত্তর দিবার জন্য যেন উন্মুখী হইয়া থাকে। এ এমন এক অবস্থা, ক্ষেত্রবাবুর পক্ষে যাহা সম্পূর্ণ নূতন। নিভাননীর সঙ্গে বিবাহ হইয়াছিল, তখন তাহার বয়স উনিশ, নিভাননীর দশ। তখন নারীর মনের আগ্রহ বুঝিবার বয়স হয় নাই তাহার। এতকাল পরে—এসব নৃতন ব্যাপার জীবনের। —আচ্ছ, আপনার অনেক দেশ ঘুরেছেন, পাহাড় দেখেছেন ? —তিনপাহাড়ী বলে একটা স্টেশন আছে লুপ লাইনে। সেখানে বাবা কিছুদিন রিলিভিং-এ ছিলেন, সেখানে পাহাড় দেখেছি । —আপনি তো দেখেছেন, আমি এখনও দেখি নি। মেয়েটি বিস্ময়ের স্বরে বলিল, আপনি পাহাড় দেখেন নি ? ক্ষেত্রবাবু হাসিয়া বলিলেন, নী, কোথায় দেখব ? বরাবর কলকাতাতেই আছি। স্কুলের ছুটি থাকলেও টুইশানির ছুটি নেই। যাতায়াত বড় একটা হয় না। আপনাদের বড় মঞ্জ, পাসে যাতায়াত করতে পারেন। মেয়েটি বিস্ময়ের স্বরে বলিল, ও ও:! খু-উ-ব । —গিয়েছেন কোথাও ? —দুস্কায় আমার এক পিসেমশায় চাকরি করেন, ছুম্বক রাজস্টেটে। সেখানে মার সঙ্গে গিয়ে মাসখানেক ছিলাম একবার। আর একবার পুরী যাওয়ার সব ঠিকঠাক, আমার ছোট ভাইয়ের অস্থখ হল বলে বাবা পাস ফেরত দিলেন। সামনের বছর যাবেন বলেছেন। ও, আপনাকে আর দুটো পান দি– —না না, আমি বেশী পান খাই নে। বরং থাবার জল এক গ্লাস যদি– —আনি—বলিয়াই মেয়েটি বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেল এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় ( অখও স্বখ জীবনে পাওয়া যায় না ), তখনই বাহির হইতে শশীবাবুর সহিত ক্ষেত্রবাবুর দাদা গোবৰ্দ্ধনবাবু ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, ক্ষেত্র, তা হলে চল যাই। . ' একটু পরে জলের মাস হাতে মেয়েটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয় নিঃশবে মাসটি তক্তাপোশের কোণে রাখিয়া কিঞ্চিং দ্রুতপদেই চলিয়া গেল। ক্ষেত্রবাৰু ও তাহার দাদা ও বিদায় লইয়া আসিলেন । সেই দিনই রাত্রে ক্ষেত্রবাবু ৰউদিদির কাছে প্রকারীন্তরে বিবাহের মত প্রকাশ করিলেন। পরবর্তী তিন-চারি দিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক হইয়া গেল, সামনের অগ্রহায়ণ মাসের দোসর। ভাল দিন আছে। বরপণ একশো এক টাকা নগদ ও দশ ভরি সোনার গহনা। ঠিকুঞ্জী কোষ্ঠী মিলিলে কথাবাৰ্ত্তা পাকা হইবে । , ক্ষেত্রবাবু দাদাকে বলিলেন, দাদা, তা হলে কাল যাব। —এখনই কেন ? আর দু-চার দিন থাক না ? —না দাদা, খোকাখুকী রয়েছে পড়ে সেখানে ! ধাই একবার।