পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গানে প্রকৃতির মধ্যে তিনি নিজেই আছেন। বিভূতিবাবুর ঈশ্বরও বিশ্বব্যাপী, তিনি স্টার স্বষ্টির দীনতম বস্তুতেও প্রকাশিত। তিনি সমগ্র প্রকৃতির ভিতরে প্রকাশিত। প্রকৃতির সৌন্দর্য তাকে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। তিনি এই সৌন্দর্যের ভিতর দিয়েই র্তার সঙ্গে commune করতে থাকেন। এর মূলে বিবর্তনের চেতনা নেই, কিন্তু বিশ্ববোধ বিদ্যমান—অনন্ত কোটি গ্ৰহনক্ষত্র মিলিয়ে যে বিশ্ব। আমি মাকাল-লতার কাহিনী থেকে আগে কিছু উদ্ধৃতি দিচ্ছি, এ থেকে স্টার চিন্তার ধারাটি অমুসরণ করা যাবে। “কার মহতী কল্পনার মধ্যে এ স্বন্দর মাকাল-লতার দুলুনি, এর খামপত্রগুচ্ছ, এর টুকটুকে রাঙ। স্বগোল মুঠাম ফলগুলো ছিল বীজরুপে অধিষ্ঠিত ? বাম্পাগ্নিপ্রোজ্জল শতশত সহস্ৰ সহস্ৰ লক্ষকোটি নীহারিকা যিনি স্বষ্টি করেচেন সেই মহারুদ্রের ভয়াল রূপ কোথায় মহাশূন্যে দূর প্রান্তে ; আর কোথায় এই পৃথিবী-গ্রহের এক কোণে স্বনিভৃত নির্জন লতাবিতান , হুর্যের সে বিরাট হাওয়ার বহু মাইলব্যাপী বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে, সজল বর্ষার মধ্য দিয়ে, বসন্ত Y), মধ্য দিয়ে, বনবিহঙ্গকাকলীর মধ্য দিয়ে বনকুস্কমের স্ববাসের মধ্য দিয়ে পরিক্রত হয়ে প্রভাতের রৌদ্ররূপে যে লতাবিতানকে আলো করেচে,—আর তারই মধ্যে এই সুন্দর চিকণ স্বপুষ্ট রাঙা মাকাল ফল লতাগ্রভাগে দোদুল্যমান। ••• 'ওমিক্রন সেটির অগ্নিলীলার মধ্যে এই গোল গোল রাঙা মাকাল ফলের স্বপ্ন লুকোনো আছে ।” মনের এই বিস্ময় উচ্চ কাব্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে। রচনাটি আগাগোড়াই তাই। তবে 'ওমিক্রন সেটি' নামক একটি মাত্র অতিকায় (pulsating red giant ) নক্ষত্রের উপর, মাকাল ফল স্বষ্টিতে, এতখানি নির্ভর কেন করা হল তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। কারণ এই শ্রেণীর লাল দানবাকার তারকা (একে variable star ও বলে) তো ঐ একটি নয় । সর্ববৃহৎ নয় । মীরা ( বা মীরা সেটি) নামেও এটি পরিচিত। বিভূতিবাবুর মনে এই মুহুর্তে কি ছিল তা বোঝবার উপায় নেই। কিন্তু তবু এই কাব্যের স্বর মনকে দোলা দেয়, ওমিক্রন সেটি কোথায় হারিয়ে যায় এর স্বরের মধ্যে। প্রকৃতির প্রতি বিভূতিবাবুর আকর্ষণ কমি উপায়ে নয়, বই পড়ে, যত্ন করে সৌন্দর্ধ বিশ্লেষণ করে তিনি আকর্ষণ বোধ করেন নি। এবং ভঙ্গি হিসাবে তিনি প্রকৃতিকে সাহিত্যে স্থান দেননি। এটি তার প্রাণের জিনিস । মানুষ থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজঃ একটি ইনস্থলেটেড পরিবেশ গড়ার ব্যাপার নয়। মানুষকে তিনি কখনো এড়াননি। সরল দরিদ্র মামুষের মধ্যে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেছেন নিবিড়ভাবে । জৈব ক্ষুধার মতোই প্রকৃতির প্রতি র্তার মানসক্ষুধা, কিন্তু তা মানুষকে বাদ দিয়ে কখনো নয়। রোম্যাটিক কবিদের মতো প্রকৃতি-বিস্ময়ের মধ্যে বা আড়ালে আত্মগোপন করার প্রশ্ন বিভূতিবাবুর ক্ষেত্রে আদৌ ওঠে না। ওয়ার্ডসওয়ার্থের সগোত্র তিনি হতে পারেন, কিন্তু ওয়ার্ডসওয়ার্থের সাধ্য কি পথের পাঁচালী বা আরণ্যকের মতো একখানা বই