পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লেখেন। তাছাড়া ওয়ার্ডসওয়ার্থ ছোট সেলানডাইন ফুলের পরিণাম দেখে মাসের পরিণাম চিন্তা করতে পারেন, কিন্তু বিভূতিবাবু ছোট মাকাল ফলের ভিতর দিয়ে বিশ্বস্রষ্টার অসীম লীলা দেখতে পান। ওয়ার্ডওয়ার্থের হাহুতাশ, বিভূতিবাবুর ecstasy—একেবারে আনন্দরভসের আবেশবিহবলতা 2 "...রোজ দুবেলা যেতাম মাকাল ঝোপের তলায়—এক মাস দেড়মাস ধরে কত রূপে একে দেখেছি—এই লতাবিতানকে। প্রভাতের আলোতে, ঘন বর্ষার মেঘমেদুর সন্ধ্যায়, নির্জন ভাদ্র দ্বিপ্রহরে নিস্তব্ধ প্রশাস্তির মধ্যে উদার নীলাকাশের তলে, ঘুঘু ডাকা উদাস বনানীর পটভূমিতে, স্বন্দর জোৎস্ন রাতের প্রথম প্রহরের জ্যোৎস্নায়।-খানিকটা সেখানে দাড়ালেই সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে পড়ি, কেমন যেন সারা দেহ শিউরে ওঠে, মন অপূর্ব ভাবে ও স্বপ্নে বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে।...সে স্বপ্ন কিসের কি করে বলবো...ফুলে ভরা শাখার পিছনকার নীল আকাশের স্বপ্ন, কোনো মহাশিল্পী মহাদেবতার প্রত্যক্ষ আবির্ভাবের স্বপ্ন, সবুজ ঝোপের মাথায় ফলন্ত রাঙা মাকাল ফলগুলির স্বপ্ন—গভীর সৌন্দর্যের স্বপ্ন। পাগল করে দেয় ঐ স্বপ্ন । "এ মাকাল-লতার ঝোপ যেন পবিত্র দেবায়তন, অতি পবিত্র, অতিস্বন্দর। সৌন্দর্যের পূজারী যে, এই দেবায়তনে দেবতার আবির্ভাব সে দর্শন করে। এখানে জাগ্রত ও প্রত্যক্ষ দেবতাকে প্রণাম কর।”--- এই অবহেলিত ফলের লতাকুঞ্জেও বিভূতিবাবু তার সৌন্দর্যের দেবতাকে দেখতে পান। প্রকৃতির সৌন্দর্য সমষ্টিগত ভাবে যেন খাইস্ট, এই খাইন্টের ভিতর দিয়ে তিনি তার পরম দেবতাকে, পরমা শক্তিকে, ঈশ্বরকে, লাভ করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঈশ্বরের মহিমা বহন করছে বিভূতিবাবুর দৃষ্টিতে। এই সঙ্গে আর একবার দ্রবময়ী আর পাগলা ঠাকুরের কথা ভাবুন। তাদের ঈশ্বরের পথ সরল পথ, বিভূতিবাবুরও তাই। বিভূতিবাবু হে অরণ্য কথা কও বইতে এক জায়গায় স্পিনোজা থেকে কয়েক লাইন উদ্ধৃত করেছেন, এবং তার সঙ্গে রারট্রাণ্ড রাসেল, জেমস জীনস্ ও ম্যাক্স প্ল্যাংকের কথাও আছে। কিন্তু ৰিভূতিবাবুর পরবর্তী কথার সঙ্গে এদের কথার বিশেষ মিল খুজে পাওয়া গেল না। বিভূতিবাবু উদ্ধৃতিগুলির পরেই বলেছেন— - “ওপরের কথাগুলি সমৰ্থন করে আমারই অনুভূতির, সে অমৃভূতির কথা আমি এই ডায়েরীর নান! স্থানে নানা আকারে লিখেছি। সেই স্তন্ধ চিন্ময় ভাব-লোক যার সন্ধান মেলে নদীতীরে নেমে-আসা অপরান্ত্রের নির্জনতায়, বন-ঝোপে ফোটা বন-কলমী ফুলের উদাস শোভায়, আঁধার নিশীথে মাথার ওপরকার জলজলে নক্ষত্র ছিটানো ছায়াপথের বিরাট ইঙ্গিতে। যে জীবন রহস্তের মূল উধ্বর্ণকাশে–শাখা-প্রশাখা ধরণীর ধুলিতে।” কিন্তু ইংরেজী উদ্ধৃতির সঙ্গে এ সব কথার মিল না থাকলেও অন্তত স্পিনোজার নামটি তাৎপর্যপূর্ণ। মনে হয় স্পিনোজার প্যানখীইজম্ তত্ব তার মনের সঙ্গে অনেকখানি মেলে। প্যানখীইজম্—অর্থাৎ স্বষ্টির সীমার মধ্যেই ঈশ্বর নিবদ্ধ। বিভূতিবাবুর প্রকৃতি-পূজার সঙ্গেও