পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবৰ্ত্তন কী করে এমন হতে পারে ? এত করে চিঠি দিলাম, একবার চোখের দেখা – —তুমি তো বললে চোখের দেখা। হাতে পয়সা না থাকলে তো আর— —হঁ্যা গো, যদি মরেই যেতাম, তা হলে একবার তোমার সঙ্গে দেখাটাও যে হত মা ! —লে সবই বুঝলাম। আমার অবস্থাটা তোমরা দেখবে না তো ? তোমাদের কেবলযদুবাৰুর স্ত্রী বীজের সহিত বলিল, অমন কথা বলে না। মুখে পোকা পড়বে। আমি যেমন নীরবে সয়ে গেলাম এমন কেউ সহি করবে না, তা বলে দিচ্ছি। রাত্রে জরে পুড়েচি, শুধু মন স্থাপিয়েচে—মরে গেলে তোমাকে একটিবার চোখের দেখাটা হল না বুঝি, তাও কাউকে আমি বিরক্ত করি নি। চারিদিক চাহিয়া স্বর নিচু করিয়া বলিল, আর এমন চামার! এমন চামার ! এক পয়সার সাবু না, এক পয়সার মিছরি না । বরং তুমি যে টাকা পাঠাতে মাসে মাসে, তা থেকে কেবল আজ দা ও এক টাকা, কাল দী ও আট আনা —ওই অবনী ঠাকুরপো । না দিলেও চক্ষুলজ্জা, ওদের বাড়ী, ওদের ঘরে জায়গা দিয়েচে । জায়গা দিয়েচে কি আমনি। ওই টাকাটা সিকেট। তো মাছেই—আর এদিকে বাক্যির জ্বাল। কী ! এক-একদিন ইচ্ছে হত—এই সত্যি বলচি দুপুরবেলা—ব্রাহ্মণের সামনে মিথ্যে পলি নি—যে, গলায় দড়ি দিয়ে মরি— এই সময়ে অবনীর বিধবা দিদি (তিনি যদুবাৰুরও বড় ) ডাব কাটিয়া আনিয়া বলিলেন, বউ, এক মাস জল নিয়ে এস, আর এই রেকাবিতে দুখান৷ বাসোতা—কোথায় কী পাব বল ভাই ! বাসোতা দুখানা খেয়ে একটু জল—আমি গিয়ে ভাত চড়াই। যদুবাবুর স্ত্রী জলহাতে আসিয়া বলিল, ঠাকুরঝি লোকট। এই বাড়ীর মধ্যে ভাল লোক। নইলে বউ—ও বাবা-খুরে নমস্কার। বলিয়া উদ্দেশে প্রণাম করিয়া জলের মাসটা যদুবাবুর সম্মুখে নামাইয়া রাখিল । বৈকালের দিকে অবনী বলিল, দাদার কি এখন গুড়, ফ্রাইডের ছুটি ? -ईT1 | -कििन ? —মঙ্গলবার খুলবে। ওই দিনই ওকে নিয়ে যাব ভাবচি। –তাই নিয়ে যান। এখানে বউদিদির শরীরও টিকচে না, মনও টিকচে না। তাই কখনও টেকে ? আপনি রইলেন পড়ে কলকাতায়, উনি রইলেন এখানে। ছেলে নেই, পিলে নেই। আপনার বউমার কাছে কেবল কান্নাকাটি করেন, দুঃখ করেন। নিয়ে যান, সেই ভাল। তা ছাড়া আমাদের এখানে অস্ববিধে। ঘরদোর নেই – দুখানি মাত্র স্বর। আবার আমার ছোট ভগ্নীপতি শিশির নাকি আসবে শুনছি ছেলেমেয়ে নিয়ে— কতদিন আসে নি। তারা এলেই বা কোথায় থাকে । তাই বলি দাদাকে চিঠি লিখি, দাদা এসে ওঁকে নিয়েই যান। - —না, তুমি যা করেছ, যথেষ্ট উপকার করেছ। এতদিন কে রাখে! যাই, একটু বেড়িয়ে আলি– -