পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী সারারাত্রি বড় রাস্তা দিয়া ঘড়ঘড় করিয়া ঘোড়ার গাড়ী আর ঠুনঠুন করিয়া রিকৃশ৷ ছুটিতেছে—ক্ষেত্রবাৰু বিনিজ চক্ষে সারারাত্রি ধরিয়া শুনিয়াই চলিলেন। অনিলা ঘুমাইয়া পড়িয়াছে,ছেলেমেয়ের ঘুমাইতেছে,সন্মুখেকী বিপদ, ইহাঙ্গের সে সম্বন্ধে কোন ধারণাই নাই। কী করিয়া উদ্যত জাপানী বোমার হাত হইতে ইহাদের বঁাচাইবেন ? বঁfচাইতে পারিবেন কি শেষ পর্যস্ত ? হাতে টাকা পয়সা কোথায় ? সারারাত্রি ক্ষেত্রবাৰু বিছানায় এপাশ ওপাশ করিলেন। পরদিন স্কুলের প্রমোশন। সাহেব খুব সকালে উঠিয়া—অভিভাবকদের পড়িয়া শোনাইবাব জঙ্ক ষে রিপোর্ট লিখিয়াছেন, তাহা অার-একবার পড়িয়া দেখিতে বসিলেন। আজ ছেলেদের প্রমোশনের পর অভিভাবকদের সভায় এই রিপোর্ট পড়া হইবে—প্রতি বৎসর হইয়া থাকে, অভিভাবকদের নিমন্ত্রণ করা হয়, এবারও হইয়াছে।

  • বড়ই আনন্দের কথা সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজী পরীক্ষার ফল এবার যথেষ্ট আশাপ্রদ , যদিও ক্লাসের সৰ্ব্বোচ্চ নম্বব শত-করা বাহান্ন, তবুও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রত্যেক উত্তরের খাতা আমাকে যথেষ্ট সন্তোষ দান করিয়াছে। ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে হরিচরণ এবার গ্রামারে বিশেষ উন্নতি করিয়াছে, যদিও ক্রিয়াপদের যথার্থ প্রয়োগ এখনও সে শিক্ষা করে নাই । গ্রামার-শিক্ষার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এজন্য যত্ন লইতেছেন। ঐমান নবীনচন্দ্র গুই ইংরেজী আর্টিকুলের ব্যবহারে বালকস্থলভ ভ্রম প্রদর্শন করা সত্বেও তাহার গ্রামারের জ্ঞান উন্নতির পথে অগ্রসর হইতেছে। নবম শ্রেণীর অঙ্কের ফল এ বৎসর আশাতীত ভাল। ইমান গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় নব্বই নম্বর পাইয়া অঙ্কে ক্লাসের সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়াছে। আমি এই বালকের গত বৎসরের অঙ্ক পরীক্ষার ফলের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি— বিগত বৎসরের ষান্মাসিক ও বাধিক পরীক্ষায় শ্ৰীমান গোপাল বীজগণিত ও জ্যামিতিতে যথাক্রমে আটচল্লিশ ও বত্রিশ নম্বর মাত্র পায়—এক বৎসরের মধ্যে সেই বালকের এই উন্নতি শুধু যে কেবল অন্ধশিক্ষকের কৃত্তিরে পরিচায়ক তাহা নহে, বালকের নিজের অধ্যবসার ও আগ্রহেরও নিদর্শন বটে। আমি এজন্য তাহাকে একটি স্বাক্ষরিত প্রশংসাপত্র দিব স্থির করিলাম। শ্ৰীমান লালগোপাল ধর ইতিহাসে এ বৎসর-”ইত্যাদি।

অভিভাবকদের কাছে এই ধরনের রিপোর্ট পাঠ কোন স্কুলেই হয় না—কিন্তু সাহেবের বিশ্বাস, ইহাতে অভিভাবকেরা লঞ্জ থাকে, স্কুলের ছাত্র মুখ্যা বাড়ে। এই ধরণের রিপোর্ট পাঠ নাকি ক্লার্কওয়েল লাহেবের স্কুলের একটি বৈশিষ্ট্য। কৃতী বালকদিগকে স্বাক্ষরিত প্রশংসাপত্র দান আর একটি বৈশিষ্ট্য ; যদিও ছেলেরা আড়ালে বলাবলি করে, রৌপ্যপদক দিতে অর্থব্যয় আছে, প্রশংসাপত্র দিতে খরচ শুধু কাগজের। মৃস্টারের বেলা নয়টার মধ্যে আসিয়া গেল। কাল সারকুলার দেওয়া হইয়াছিলবিভিন্ন মাস্টারের বিভিন্ন কাজ। কেহ প্রমোশন-প্রাপ্ত ছেলেদের নাম, ক্লাস ও সারি তালিকা করিতেছে, কেহ ভাল ছাত্রদের পরীক্ষার খাতাগুলি আলাদা করিয়া রাখিতেছে, কেহ নতুন