পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অম্নবৰ্ত্তন ছাড়িয়া বাহিরে আসা এই প্রথম, বিশেষ করিয়া আস্সিংড়ির মত অঙ্গ পল্লীগ্রামে। প্রত্যেক কাজেই অস্ববিধা, না আছে দেওয়াল টিপিলেই আলো, কল টিপিলেই জল, না আছে ভাল রাস্তাঘাট, না আছে একটা টকি-বায়স্কোপ । তবুও দিন যায় কায়ক্লেশে। মেয়েছেলে, কেহ নিজের বাপের বাড়ী শ্বশুরবাড়ীকে অপর মেয়ের কাছে ছোট হইতে দিতে চায় না। কুসুম বাগবাজারের গল্প করে তো অমিলা ডিহিরি-অন-সোনের গল্পে তাহাকে ছাড়াইয়া যাইতে চায়। শীত কাটিয়া বসন্ত পড়িল । ক্ষেত্রবাবুর মনে পড়িল, আমের বউলের গন্ধ কতদিন এমন পান নাই, বাশবন, মাঠে ঘেটুফুল ফোটার দৃপ্ত কতকাল দেখেন নাই। বহুদিন পূর্বের বিশ্বত শৈশকালের স্মৃতি অতীত মাধুৰ্য্যে মণ্ডিত হইয়৷ শৈশবের মাতাপিতার কত হাসি ও কথার টুকরা ভুলিয়া-যাওয়া স্নেহশ্বর লইয়া মনের মধ্যে উকি মারে । হাতের পয়সা ফুরাইয়া গেল। অনিল পিতৃগৃহ হইতে আসিবার সময় লুকাইয়া সামান্য কিছু অর্থ আনিয়াছিল, তাই দিয়াই এতদিন চলিল, নতুবা ক্ষেত্রবাবু স্কুল হইতে বিশেষ কিছু আনেন নাই। ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুল আর খোলে নাই, আঠারোই ডিসেম্বরের পরে কলিকাতার কোন স্কুলই খুলে নাই –ক্ষেত্রবাৰু স্কুল হইতে পত্র পাইয়া জানিয়াছেন, খবরের কাগজেও দেখিয়াছেন । স্কুল কি উঠিয়া গেল! হেডমাস্টারের নামে দুই-তিনখানা পত্র দিয়াও উত্তর না পাওয়াতে বৈশাখ মাসের প্রথমে ক্ষেত্রবাৰু নিজেই কলিকাতা গেলেন। সে কলিকাতা আর নাই, রাস্তা দিয়া কত কম লোকজন চলিতেছে, তেল বন্ধ হওয়ার দরুন মোটর গাড়ীর সংখ্যা বহু কমিয়া গিয়াছে, রাত আটটার পর ফুটফুটে অন্ধকার। পিটার লেনের মোড়ে ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুল-বাড়ীটার আর সে ঐছাদ নাই। গেট ভিতর হইতে ভেজানো ছিল। ঢুকিয়া ক্ষেত্রবাবু ডাকিলেন, ও মথুরা—মথুরা ! নীচের তলার ঘর হইতে কেবলরাম বাহির হইয়া আসিল, ক্ষেত্রবাবুকে দেখিয়া ভাড়াতাড়ি দুই হাত জোড় করিয়া মাথা নীচু করিয়া বলিল, কেমন আছেন বাৰু ? ক্ষেত্রবাবু বলিলেন, ও কেবলরাম, সাহেব কোথায় ? কেবলরাম হতাশার স্বরে দুই হাত তুলিয়া বলিল, তিনি কলকাতায় নেই। নাগপুরে গেছেন। আমার মাইনে চুকিয়ে দিয়ে গেলেন যাবার সময়। —স্কুল ! - —উঠে গিয়েছে বাৰু । —তবে তোকে মাইনে দিচ্ছে কে এখানে । —হেডমাস্টার বললেন, তুই এখানে থাক। চিঠিপত্র এলে তার নামে পাঠাড়ে বলে দিয়েছেন। যদি এর পরে স্কুল চলে—কিন্তু তা চলবে না বাৰু, বাড়ীওলায় পাচ মাসের ভাড়া বাকী, শুনছি নাকি নোটিশ দিয়েছে । -