পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত কান্থ তার পরদিন বন্ধুর হাতে পল্লীবাসিনী পিতামহীকে সমর্পণ করে কৰ্ম্মস্থানে চলে গেল, তার ছুটি ফুরিয়েচে । বন্ধুর মার নাম নীরজবাসিনী, প্রব ঠাকরুণের চেয়ে তার বয়স ছ'পাঁচ বছর কম হবে, মাথার সব চুল এখনও পাকে নি—তবে সেট স্বাস্থ্যের গুণেও হতে পারে । প্রব ঠাকরুণ এর সঙ্গে দশাশ্বমেধ ঘাটে বিকেলে বেড়াতে গেলেন—খুব লোকজনের ভিড়, গান, বক্তৃতা, কথকতা। এক গেরুয়া কাপড় পরা সমিসির চারিপাশে খুব ভিড়, নীরজা সেখানে জুটলেন গিয়ে। কৰ্ম্মবাদ, সেবাধৰ্ম্ম ইত্যাদি নিয়ে সমিসি কি সব কথা বলে যাচ্ছেন, দ্রব ঠাকরুণ অতশত বুঝতে পারলেন না। ফিরবার পথে দ্রব ঠাকরুণ জিজ্ঞেস করলেন— উনি কেড়া ? —উনি রামকৃষ্ণ মঠের একজন বড় ইয়ে—স্বামী লেবানন্দ । —কি মঠ ? - —কেন রামকৃষ্ণ মঠের কথা শোনেন নি; ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের—মস্ত বড় কাও ওঁদের— —রাম আর কৃষ্ণ দুই ঠাকুরের নাম বুঝি ? নীরজা বিস্ময়ে দ্রব ঠাকরুণের দিকে চেয়ে বল্লেন—আপনি শ্ৰীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের নাম শোনেন নি ? —না । কে তিনি—কই না—এখানে আছেন ? নীরজা আর কোন কথা বল্লেন না। এমন বৰ্ব্বরের সঙ্গেও তিনি বেড়াতে বেরিয়েছেন যে রামকৃষ্ণদেবের নাম পৰ্য্যস্ত জানে না ! দুব ঠাকরুণের কোনো দোষ নেই, তিনি অজ্ঞ সেকেলে লোক, অজ পল্লীগ্রাম ছেড়ে জীবনে কখনো কোথাও যাননি। গোপীনাথপুরের জঙ্গলে ওনাম কখনো কারো মুখে শোনেনও নি। তিনি জানেন, রাম, কৃষ্ণ, রাধা, দুর্গা, লোচনপুরের জাগ্রত কালী, কালীঘাটের কালী ইত্যাদি। অতবড় নামের কোনো ঠাকুরের কথা কই— কেউ তো তাকে বলে নি । এব ঠাকরুণ ভয়ে ভয়ে থাকেন। তার সঙ্গিনী তাকে নিতান্ত নাস্তিক, অজ্ঞ, মূৰ্খ বলে ন৷ ঠাওরান । দিন কয়েক যেতে না যেতেই দ্রব ঠাকরুন বুঝে নিলেন সদিনীটি ধৰ্ম্মবাতিকগ্রস্তা। সাধু সমিসির ভক্ত। যদি কোথাও কোনো নতুন ধরণের সাধু মন্দিরে কি ঘাটে বসে আছে, তবে আর নিস্তার নেই। সেখানে বসে অমনি গরুড়ের মত হাত জোড় করে বক্‌ বক্‌ বকুনি জুড়ে দেবে। আর কি-সব কথা জিজ্ঞেস করবে, কৰ্ম্মফল কি, পুনর্জন্ম কি, হেনো তেনে। রাস্তাঘাটে বেঙ্কলে ঘন্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, বাসায় ফেরবার নামটি নেই। এত বিরক্ত ধরে এব ঠাকক্ষণের—কিন্তু তিনি কি করবেন ? কাশীর রাস্ত চেনেন না—একাও বাসায় ফিরতে । -