পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ذهذ কৃষ্ণলাল ঘরে একা থাকে না । ছোট্টম্বরে তিনটি ময়লা বিছানা মেজের উপর পাতা । সে ঢুকিয় দেখিল ঘরে কেবল যতীন শুইয়া ঘুমাইতেছে। আর একজন রুমমেট ট্রামের কগুীকৃটার, সাড়ে চারটার পরে সে ডিউটি হইতে ছুটি লইয়া একবার আধঘণ্টার জন্য বাসায় আসে এবং তারপরই সাজিয়া-গুজিয়া কোথায় বাহির হইয়া যায়। নীচে পাইস হোটেলে ইহাদের খাইবার বন্দোবস্ত । কৃষ্ণলালের সাড়া পাইয়া যতীনের ঘুম ভাঙিয়া গেল । সে বলিল—এত বেলায় ? — বেলায় তা কি হবে ? চাকরীটা গেল আজ । -সে কি ! এতদিনের চাকরীটা— —কত করে বল্লম বড়বাবুকে । তা শোনে কি কেউ ? গরীবের কথা কে রাখে বলে। ! —-হয়েছিল কি ? 疆 --ক্যাশ জমা দিতে দেরি হয়েছিল। বলে, তুমি ক্যাশ ভেঙেচ । —তাই তো-তাহোলে এখন উপায় । --wেখি কোপাও আবার চেষ্টা—জুটে যাবে একটা না একটা । আমাদের এক ধোর বন্ধ *{ঞ্জার Wোর খোলা—আমাদের অন্ন মারে কে । সামান্য কিছু পয়সা হাতে ছিল—পাইল হোটেল হইতে শুধু ডাল-ভাত খাইয়া আসিয়৷ কৃষ্ণলাল কিছুক্ষণ বিশ্রাম করিল, পরে নবীন কুণ্ডু লেনে একটি খোলার বাড়ীতে চুকিয় ডাক দিল---ও গোলাপী—গোলাপী – তাহার সাড়ায় যে বাহির হইয়া আসিল, সে বর্তমানে রূপযেীবনহীন প্রৌঢ়া, পরনে আধ ময়লা খয়েরী রংয়ের শাড়ী, হাতে গাছকয়েক কাচের চুড়ি । ছ-গাছা সোনাবাধানো পেটি। মাথার চুলে পাক ধরিয়াছে, গায়ের রং এখনও বেশ ফর্ম। গোলাপীকে ত্রিশ বছর আগে দেখিলে ঠিক বোঝা যাইত গোলাপী কি ছিল। এখন আর তাহার কি আছে ? কৃষ্ণলাল তুখন সবে ঔষধের ক্যানভাসারের পদে বহাল হইয়াছে – তাহার চমৎকার চেহারা ও কথাবার্তা বলিবার ভঙ্গিতে রেলগাড়ীর প্যাসেঞ্জার কি করিম সহজেই ভুলিয়া যাইত—জলের মত পয়সা আসিতে লাগিল। এই নবীন কুণ্ডু লেনেই অন্য এক বাড়ীতে এক বন্ধুর সহিত আসিয়া সে গোলাপীকে দখে। তখন নতুন যৌবন, হাতেওঁ কাচা পয়সা । গোলাপীর বয়স তখন ষোলো সতেরো। রূপ দেখিয়া রাস্তার লোক চমকিয়া দাড়াইয়া যায় । গোলাপীর মার হাতে বছরে বছরে মোট ঢাকা জমে। কৃষ্ণলাল সেই হইতেই নবীন কুণ্ডু লেনের নৈশ অধিবাসী। কত কালের কথা –গোলাপীর ঘরে মেহগনি কাঠের দেরাজ হইল, ঘরের দেওয়ালে বিলম্বিত বড় বিলাতি কাচ বুলানো আয়ন হইল, সেকালে প্রচলিত ম্যাকাসার অয়েলের শিশির পর শিশি ভিড় &মাইয়া তুলিল—বাতায়ন মালতী ফুলের টবে সঙ্গিত হইয়া বাড়ীর অন্যান্য ঘরের অধিশ্বাসীদের মনে ঈর্ষার উদ্রেক করিল।