পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত 있이 তে পায়া ভারী হয়ে স্বাবে । —কি বলে না গোলাপী, বলতেই হবে । —তোমার মত অমন কারো হয় না, আমি তে কতই দেখলাম দাতের মাজনের, ওষুধের ফিরিওয়ালা—আমাদের এই গলির মুখে হারমোনিয়াম গলায় বেঁধে নাচে, বত্তিমে দেয় পোড়ারমুখোরা—কিন্তু সে সব ফিরিওয়াল৷ তোমার মত নয়— কৃষ্ণলাল রাগের স্বরে বাধা দিয়া বলিল—কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা! তোকে নিয়ে আর পারিনে দেখচি–তার হ’ল ফিরিওয়ালা—আমরা হলুম ক্যানভাসার—হারমোনিয়াম পিঠে বেঁধে যারা গান গেয়ে ঘুঙর পায়ে দিয়ে নেচে বেড়ায়, আমরা কি সেই দলের ? অপমান হয়, ওকথা আমাদের ব’লে না ! —যাক যাক, ভুল হয়েচে, তুমি এখন ঠাণ্ড হয়ে বসে চ খেয়ে নেও । গোলাপীর মন আজ বেশ খুশি • কতদিন পরে যেন যুবক কৃষ্ণলালের অঙ্গভঙ্গি ও স্বন্দর সতেজ গলার স্বর সে আবার শুনিল । ত্রিশ বংসরের অন্ধকার কালে৷ ছেড়া পদাটা কে টানিয়া সরাইয়া দিল । সে যত্ন করিয়া কৃষ্ণলালকে খাওয়াইল—কৃষ্ণলাল বিদায় লইয়া যখন আসে তখন বলিল— একটা কথা বলি শোনো । যদি খাওয়া-দাওয়ার কোনো কষ্ট হয়, তবে আমার কাছে এসে অবিপ্তি খেয়ে যাবে। এই বেৰ্দ্দ বয়েসে না খেলে শরীর থাকবে কেন ? অামায় কিছু দিতে হবে না এখন। ওই সোনারবেনেদের ঠাকুরবাড়ীতে একটা ঝিয়ের দরকার, সকাল-সন্ধ্যে কাজ করব —অামি কাল থেকে সেখানে কাজে লেগে যাবো–তা তোমায় বলাও যা না বলাও তাই—তুমি কি আসবে ? তোমায় আমি চিনি কিনা ! কৃষ্ণলাল হাসিয়া বলিল—ভালোই তো । তোর রোজগার এইবার খাই দিনকতক—সে সাধ আমার আছে অনেকদিন থেকেই । আচ্ছ। তাহ’লে এখন আসি, ওবেলা হয়তে। আসিবো—সন্ধ্যের পর । তাহার পর এক মাস কাটিয়া যায়। কিন্তু গোলাপীর বাড়ী কৃষ্ণলাল আর আসিল না। মুখের দিনে গোলাপীকে সে অনেক দিয়াছে—এখন দুঃখের দিনে বসিয়া বসিয়া গোলাপীর অন্ন ধ্বংস করিবে তেমন-বংশে জন্ম নয় কৃষ্ণলালের । বিশেষত দেখিতে হইবে, গোলাপী ও প্রৌঢ়া—ঝি-গিরি ভিন্ন এখন আর তার কোনো উপায় নাই । মেসের ভাড়া বাকি পড়িয়াছিল দু'মাসের, মেসের অব্যক্ষ কৃষ্ণলালকে ডাকিয়া বলিল— কি কৃষ্ণবাবু, আমাদের রেন্টটা কি হবে ? —আজ্ঞে ক্ষেত্রবাবু, দেখতেই তো পাচ্চেন-চাকুরীটা গেল, হাতে কিছু নেই। এ অবস্থায়— —ফি-মাসে আমি পকেট থেকে ঘরভাড়া যোগাবো কোথা থেকে সেটাও তো দেখতে হবে ? ছুদিন সময় নিন—তারপর আপনি দয়া করে সিট ছেড়ে দিন, আমি অল্প ব্যবস্থা দেখি ।