পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર૦8 বিভূতি-রচনাবলী দিতে না দিতে এদের চোখ ঘুমে ঢুলিয়া পড়ে। দিবানিদ্রা চলে বেলা চারিটা পৰ্য্যস্ত— তারপর ঘুম হইতে রক্তবর্ণ চোখে উঠিয়া কেহ বা বাজারে দু’পয়সার সওদা করিতে যায়— সেখানেও আবার আডিডা • • •এ দোকানে ও দোকানে বসিয়া তামাক খাওয়া-••চার পয়সার সওদা করিতে তিন ঘণ্টা লাগাইয়া সন্ধ্যার পর বাড়ী আসে। তারপরই আহার ও নিদ্রা । কেরোসিন তেলের দাম চড়িয়া গিয়াছে—তেল খরচ করিয়া আলো জালাইয়া রাখিতে কেহ রাজী নয়। কয়েক বাড়ী যাও—অন্ধকারে বসিয়া দু’একটা কথা বলো, গল্প করে—এক আাধ কস্কে তামাক খাও—তাহার পর বাড়ী ফিরিয়া আবার বিছানা আশ্রয় কর । দিন শেষ হইয়া গেল । # কৃষ্ণলাল এরকম জীবনে অভ্যস্ত নয়। এ কি জীবন ? অথচ সকলেই বলিবে, দাদা, সংসার আর চলে না, বড় কষ্ট । কষ্ট ঘুচাইবার চেষ্টা কোথায় ? আজ দীর্ঘ পচিশ ত্রিশ পছর ধরিয়া যার কলিকাতায় ভীষণ কৰ্ম্মব্যস্ত জীবন কাটিয়াছে, এ ধরনের অলস, শ্রমবিমুখ জীবনের ধারণাই করিতে পারে না সে । সকালে উঠিয়াই নীচের তলার কলে স্নান সারিয়া লইতে হইত। খুব ভোরে স্বান না সারিলে এমন ভিড় জমিয়া যাইবে কলে যে, আর স্নান করা চলিবে না। নীচের তলায় সেকরার দোকানের লোকেরা, শালওয়ালা, দরজি, পুব দিকের ঘরে যে মুটের থাকে সবাই আসিয়া কলে ভিড় লাগাইয়া দিবে, ইহার পর আসিবে একদল বালতি হাতে জল ধরিতে ও চাউল ধুইতে। সারি সারি লোক দাড়াইয়া যাইবে কলসী হাতে জল ভরিতে। ওপরে তিনতলায় তিনটি মেসের চাকরেরা । সকলেই কৰ্ম্মব্যস্ত, ঘড়ি ধরিয়া কাজ কলিকাতায়, সময় গেল। ছ’টা বাজে, কখন কি হবে ? দিন আরম্ভ হইয়াছে’-এখনি বাবুরা আসিয়া ভাত চাহিবে আটটা বাজিতে না বাজিতে, এতটুকু দেরি করিলে চলিবে না। স্নান সারিয়। কৃষ্ণলাল ব্যাগ হাতে বাহির হইত শেয়াল-ট্ৰ’ স্টেশনে, প্রথমেই সাতটা দশ কারাসত, সাতটা পচিশ নৈহাটি, পৌনে আটটা রাণাঘাট প্যাসেঞ্জার, সাড়ে আটটা বনগী লোকাল, আটটা পঞ্চাশ দ্বভপুকুর, ন’টা দশ কেষ্টনগর লোকাল,•••শুরু হইয়া গেল দিনের কাজ। বাতের তেল ! বাতের তেল ! দত্তপুকুরের বাঁতের তেল ! যত প্রকার বাত, ফুলা, শূলানি, কনকনানি, মাথা ধরা, পেট বেদন, ইহার একমাত্র ব্যবহারে.ভদ্রমহোদয়গণ, এই ওষুধটি আজ ত্রিশ বছর যাবৎ এই লাইনে মুখ্যাতির সহিত চলিতেছে,—এই চলিল বেলা বারোটা পৰ্য্যস্ত। বারোটা পঞ্চান্ন শাস্তিপুর ছাড়িয়া গেলে তবে সকালের কাজ মিষ্টিল | কি জীবন ! কি আনন্দ ! কি পয়সা রোজগার । কাচা পয়সা রোজ আসে, রোজ সন্ধ্যায় উড়িয়া যায়, যে পয়সা আয় করিতে জানে, সে-ই জানে খরচ করিতে, ইহাতে ক্ষোভ কি ? - কৃষ্ণলাল আরও মাসখানেক কোনোরকমে কাটাইল । জার চলে মা। এ অলস জীবন তাহার অসহ, কখনো পা ওটাইয়া কুৰ্দ্ধবৃত্তি অবলম্বন করিয়া এভাবে সে থাকে নাই। বেশিদিন এভাবে থাকিলে সে পাগল হইয়া যাইবে, নয়তো