পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ولاه چ যাইবে না কলিকাতা ছাড়িয়া । মরিতে হয় এখানেই মরিবে । পনেরো বিশ দিন এখানে ওখানে হাটাইটি করিয়াও কিন্তু চাকুরী মিলিল না । বস্ব মহাশয় ঝাড়া জবাব দিলেন। এখন স্বী চেহারার ছোকরা ক্যানভাসার—বেশ লম্বা জুলপি, ঘাড় বাহির করিয়া চুল ছাটা, লপেট জুতা পায়ে, থিয়েটারের রামের মত গল, এই সবাই চায়। বয়স হুইয়া গেলে, মানে, এখন উহাদের লোক আছে, দরকার হইলে চিঠি লিথিয়া জানাইবেন পরে। পুরোনো মেসেই উঠিয়াছিল, বারান্দাতে আছে। গোলাপীর সঙ্গে দেখা করে নাই । এখন করিতে চাহেও না সে। অনাহারে দু'দিন কাটিল মধ্যে। অবশেষে একদিন আহিরিটোলার ঘাটেই গিয়া হাজির হইল, যদি হাতকাটা তেল ওয়ালা সেই ছোকরার সঙ্গে দেখা হইয়া যায়। সে সাড়ে বারোটার স্ট্রীমারে রোজ বালি হইতে আসে বলিয়াছিল। সাত আট দিন ক্রমাগত ঘুরিয়াও কিন্তু ছোকরার দেখা মিলিল না। কৃষ্ণলালের দুঃখ শেষ সীমায় আসিয়া পৌছিয়াছে । আর চলে না। আচ্ছা, সে ক্যানভাসারি ভুলিয়া যাইতেছে না তো ? অাজ কতদিন চাকুরী নাই। কতদিন বক্তৃতা দিবার অভ্যাস নাই। চর্চা অভাবে শেষে কিনা ছোকরা ক্যানভাসারেরা তাহাকে—কৃষ্ণলালকে ছাড়াইয়া যাইবে ! সেদিন কৃষ্ণলাল নিজের টিনের ছোট স্কটকেসটি হাতে লইয়া ড্যালহাউসি স্কোয়ারের মোড়ে দাড়াইয়া হাত-পা নাড়িয়। ক্যান ভাসারের বক্তৃতা জুড়িয়া দিল, চর্চা রাখা দরকার তো বটেই, তাছাড়া সে নিজের শক্তি পরীক্ষা করিতে চায়, খরিদ্ধার জোটে কিনা সে একবার দেখিবে। এখনও তাহার যাহা গলা আছে, থিয়েটারের রামের মত গলাওয়ালা কোন ছোকরা ক্যানভাসার তাহার সঙ্গে পাল্লা দিবে, সে দেখিতে চায়। —দত্তপুকুরের বাতের তেল ! ব্যবহারে সর্বপ্রকার বাত, বেদন, মাথা ধরা, দাতশূলানি, হাত বেদন, পিঠ বেদনা-“ভদ্রমহোদয়গণ । এই ঔষধটি আজ ত্রিশ বছর ধরিয়া এই লালদীঘির মোড়ে. কুষ্ণলাল মিনিট পাচ-ছয় পরে সগৰ্ব্বে একবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিয়া লইল । বেশ ভিড় জমিয়া গিয়াছে। একজন ভিড় ঠেলিয়া কাছে আসিয়া বলিল—আমায় একটা ছোট ফাইল – 彎 কৃষ্ণলাল গম্ভীর ভাবে বলিল—আমার কাছে ওষুধ নেই—আমি বসু ইণ্ডিয়ান ড্রাগ সিণ্ডিকেটের পাবলিসিটি ডিপার্টমেণ্টের লোক, র্যাদের দরকার হবে, র্তারা একশো ছয়ের সি হরিধন পোদারের লেনে বস্ব ইণ্ডিয়ান ড্রাগ সিণ্ডিকেটের অফিসে আমার নামের এই স্লিপট নিয়ে যান দয়া করে, টাকায় চার আনা কমিশন পাবেন--দাড়ান লিখে দিচ্চি— দিন পাচ-ছয় কাটিল। কৃষ্ণলালের নেশা লাগিয়া গিয়াছে । সে বেল তিনটার সময় রোজ স্কটকেস হাতে ঝুলাইয়া ড্যালহাউসি স্কোয়ারের মোড়ে গিয়া বক্তৃতা জুড়িয়া দেয়। আফিস ফেরত লোকের ভিড় করিয়া শোনে । * •সেদিন কৃষ্ণলাল দাড়াইয়া দত্তপুকুরের বাতের তেলের গুণ ব্যাখ্যা করিতেছে, এমন সময় একজন ভদ্রলোক ভিড় ঠেলিয়া একেবারে তাহার সামনে আসিয়া দাড়াইল ।