পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२s8 বিভূতি-রচনাবলী দেখে। ত্রিশ ভরি সোনা দেবো, ওর গর্ভধারিণীর যা আছে, তা দুই মেয়েকে তিনি ভাগ ক'রে দেবেন। তাহলে মনে থাকে যেন বাবাজী— এই প্রথম তিনি আমায় ঘনিষ্ঠ সম্বোধন করলেন । চলে এলাম সেদিন এবং কয়েকদিন পরে কলকাতাতেও এলাম। তারপর আমি কোন উচ্চবাচ্য করিনি এ বিষয়ে। সীতানাথ রায় মশায় পত্র দিয়েছিলেন, লোক পাঠিয়েছিলেন। বহু অনুরোধ করেছিলেন—শেষ পর্য্যস্ত যদি আমি বিবাহ করি, উৎকৃষ্ট ধানের জমি মেয়ের নামে লেখাপড়া করে দিতে চেয়েছিলেন,—প্রায় পনেরো বিঘে। বড়ই দুঃখের সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হ’ল আমায়। তিনি আগাগোড়া ভুলের ওপর যে বাড়ীর ভিৎ পত্তন করেছিলেন, সে ভিতের ওপর আমি বাড়ী তুলতে পারি নি। সব কথা খুলে বলি নি কেন ? তখন বয়স ছিল কম। গর্বে বাধে, মুখ ছোট হয়ে যায়। এখন হ’লে সব খুলে বলতাম, তখন তা পারি নি । এখন দেশেই আছি। এই যুদ্ধের বাজারে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সংসার চালানো বড়ই কষ্ট । ব্যবসা অনেকদিন নষ্ট হয়ে গিয়েচে—বন্ধুই হ’ক আর যে-ই হ’ক ভাগে ব্যবসা না করাই ভালো—এই অতি মূল্যবান অভিজ্ঞতা ক্রয় করতে হয়েচে অতি কষ্টে উপাৰ্জ্জিত হাজার সাতেক টাকার বিনিময়ে । সেদিন প্রভা বল্লে—সামনের মাসে ধান ফুরিয়ে যাবে। ছত্রিশ টাকা চালের মণ, কি ক’রে এই পুরীপাল্লা চালাবো। সস্তায় নাকি কন্‌ট্রোলের ধান দিচ্চে মহকুমায়—চেষ্টা দেখো না ? তাই আজ ক'দিন ধরে হাটাহাটি করছি মহকুমায়। ধান সস্তায় দেবার মালিক এক বড় অফিসার, তিনি কলকাতা থেকে এসে দিন পনেরো আছেন। তার আরদালি ক'দিন ফিরিয়ে দিয়েচে । অাজ নকুড় চক্কত্তি বল্পে, এমনি না হয়—একজন উকিল ধরে হাকিমের কাছে দরখাস্ত দিতে হবে । রোজ ছেঁটে আর পারিনে— তাই দু'জনে মিলে একখানা নৌকো ভাড়া করে এসুেছিলাম। বেলা দশটার সময় হাকিমের বাসার ফটকে গিয়ে দাড়িয়ে আছি। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে না, ভেতরে ঢুকতেও সাহস হয় না। এমন সময় হাকিমের ছোকৃর আরদালিকে আসতে দেখে তাকে বল্লাম-ওহে শোনে, আমাদের দরখাস্তখানা নিয়ে যাও না সাহেবের কাছে ?

  • হাকিম বাঙালী হলেও তাকে সাহেব বলাই নিয়ম।

লোকটা ইতস্তত করচে দেখে নকুড় চকড়ি তাকে ছ' আন পয়সা দিয়ে বন্ধে-পান