পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তি ওঁর ভাল নাম বোধ হয় ছিল নিস্তারিণী । ওর যৌবন বয়সে গ্রামের মধ্যে আমন সুন্দরী বে। ব্রাহ্মণপাড়ার মধ্যেও ছিল না। ওরা জাতে যুগী, হরিনাথ ছিল স্বামীর নাম। ভদ্রলোকের পাড়ায় ডাকনাম ছিল, ‘হ’রে যুগী’। নিস্তারিণীর স্বামী হরি যুগীর গ্রামের উত্তর মাঠে কলাবাগান ছিল বড়। কাচকলা ও পাককিল হাটে বিক্ৰী ক'রে কিছু জমিয়ে নিয়ে ছোট একটা মনোহারি জিনিসের ব্যবসা করে। রেশমি চুড়ি ছ’গাছ এক পয়সা, দু'হাত কার এক পয়সা—ইত্যাদি। প্রসঙ্গক্রমে মনে হ’ল ‘কার’ মানে ফিতে বটে ; কিন্তু ‘কার’ কি ভাষা ? ইংরিজিতে এমন কোনো শব্দ নেই, হিন্দি বা উর্দুতে নেই, অথচ 'কার' কথাটা ইংরিজি শব্দ বলে আমরা সকলেই ধরে নিয়ে থাকি ! যাকৃ সে । হরি যুগীর বাড়ীতে দুখানা বড় বড় মেটেঘর, একখানা রান্নাঘর, মাটির পাচিল-ঘেরা বাড়ী। অনেক পুস্তি বাড়ীতে, দু’বেল পনেরো-ষোলোখানা পাত পড়ে। হরি যুগীর মা, হরি যুগীর দু'টি ছোট ভাই, এক বিধবা ভাগ্নী, তার দুই ছেলেমেয়ে। সংসার ভালোই চলে, মোট ভাত, কলাইয়ের ডাল ও ঝিঙে ও লাল ডাটাচচ্চড়ির অভাব কোনোদিন হয়নি, গোরুর দুধও ছিল চার পাঁচ সের। অবিপ্তি দুধের অৰ্দ্ধেকটা ব্রাহ্মণপাড়ায় যোগান দিয়ে তার বদলে টাকা আসতো । গ্রামের মধ্যে সুন্দরী বৌ-ঝির কথা উঠলে সকলেই বলতো—হ’রে যুগীর বৌয়ের মত প্রায় দেখতে’। গ্রামের নারী-সৌন্দর্ঘ্যের মাপকাঠি ছিল নিস্তারিণী। গেরস্তঘরের বেী স্নান ক’রে ভিজে কাপড়ে ঘড়া কাকে নিয়ে যখন সে গাঙের ঘাট থেকে ফিরতো, তখন তার উদ্দাম যৌবনের সৌন্দর্ঘ্য অনেক প্রবীণের মুণ্ডু ঘুরিয়ে দিত। এ গ্রামে একটা প্রবাদ অাছে অনেকদিনের । তুলসী দারোগ নদীর ঘাটের পথ ধরে নীলকুঠার ওদিক থেকে ঘোড়া ক’রে ফিরবার সময়ে তুতবটের ছায়ায় প্রস্ফুট তুত ফুলের মাদকতায় স্ববাসের মধ্যে এই সিক্তবসনা গৌরাঙ্গী বধূকে ঘড়া কাকে যেতে দেখল। বসন্তের শেষ, ঈষৎ গরম পড়েচে—নতুবা তুত ফুল স্ববাস ছড়াবে কেন ? তুলসী দ্বারোগ ছিল অত্যন্ত দুৰ্দ্ধৰ্ব জাহাবাজ দারোগা—‘হয়’কে ‘নয় করবার এমন ওস্তাদ আর ছিল না। চরিত্র হিসেবেও নিষ্কলঙ্ক ছিল, এমন মনে করবার কোনো কারণ মেই। তুলসী দারোগার নামে এ অঞ্চলে বাঘে গোরুতে একঘাটে জল খেত। তার স্বনজরে একবার যিনি পড়বেন, তার হঠাৎ উদ্ধারের উপায় ছিল না। এ হেন তুলসী দারোগ হঠাৎ উল্পনা হয়ে পড়লে সুন্দরী গ্রাম্যবধূকে নির্জন নদীতীরের পথে দেখে । বন্ধটিকে সন্ধান করুবার লোকও লাগলে। হরি যুগীকে দু’তিনবার থানায় যেতে হ’ল দারোগার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু নিস্তারিণী ছিল অন্ত চরিত্রের মেয়ে, শোনা যায় তুলসী দারোগার পাঠানো বৃন্দাবনী শাষ্ট্র সে পা দিয়ে ছুড়ে ফেলে বলেছিল তাদের কলাবাগানের কল্যাণে আমন শাড়ী