পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত ২৩৭ তারপর আমার পরিচয় পেয়ে বল্লেন—ও, আপনি বিষ্ণুরাম রায়ের নাতি। তা কি মনে করে ? —ম্রামায় কিছু টাকা ধার দিতে হবে দয়া করে, বিশেষ দরকার। রোয়ার খরচ নেই কিছু হাতে । —টাকা হবে না । —কাজী সাহেব, না দিলে আমার কোন উপায় নেই। এই তিন ক্রোশ রাস্ত রোমুরে হেঁটে এসেচি, আমার দাদা মানুষ নন, তিনি কিছু দেখাশুনা করলে আজ এই কষ্ট হয় আমার ! ধান রোয়া না হ’লে সারা বছর চালাবো কি করে বলুন । কাজী সাহেব বল্পেন— আপনাকে এখানে আহারাদি করতে হবে । ছেলেমাচুৰ্য, এতখানি হেঁটে এসেচেন—এমন সময়, বাড়ী ফিরে যাবেন সে হবে না। আমাদের প্রজা আছে একম্বর নাপিত, এই পাশেই বাড়ী তাদের, গোয়ালে রান্নাবান্ন করুন, আমি জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিচ্চি। তারাই জলটল তুলে দেবে। নতুন হাড়ি কুমোর বাড়ী থেকে আনিয়ে দিচ্চি। আহারাদি করে স্বস্থ হোন, ওবেলা কথাবাৰ্ত্ত হবে । স্নান সেরে আসুন দীৰি থেকে । দিব্য সরু চালের ভাত, কই মাছের ঝোল, গাওয়া ঘি, টাটকা দুধ, মৰ্ত্তমান কলা, আখের গুড়ের পাটালি ইত্যাদি দিয়ে পরিতোষপূর্বক ভোজনপৰ্ব্ব সমাধা হ’ল । কাঞ্জী সাহেবের আতিথ্যের ও সৌজন্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতে গেলাম দুপুরের পর। তিনি সে কথায় কান না দিয়ে বল্লেন, কত টাকা হ’লে জমি রোয়া হয় ? কত বিঘে জমি ? বল্লাম, এগারে । - হিসেব করে টাকা গুনে আমার হাতে দিয়ে বল্লেন-না। যখন জমি ছাড়া ভরসা নেই তখন আমার পরামর্শ শুমুন । লাঙল গরু কিল্পন, পরের লাঙলের ভরসায় চাষ চলে না। হাতিয়ার না থাকলে কি লড়াই হয় ? আমি বল্লাম—টাক কোথায় পাই বলুন। লাঙল গোরু করতে এখন অন্তত শ'খানেক টাকা দরকার। —আচ্ছা যেদিন আপনি আজকের টাকা শোধ দিতে আসবেন, সেদিন এ সম্বন্ধে কথা বার্তা বলা যাবে, আজ নয় । 魯 বাড়ী ফিরে আসতেই মা সব শুনে বল্লে—খুব ভদ্ধর লোক তে ওরা। আমার ছগাছা বালা আছে, বাধা দিয়ে কাজী সাহেবের টাকা দিয়ে আয়। আমি বল্লাম—বেশ কথা মা । সেই টাকা ফেরৎ দিতে গিয়ে কাজী সাহেব গোরু কিনবার জন্যে আমায় একশো টাকা ধার দিলেন আবার। আমায় বল্পেন—আজি তেত্রিশ বছর লোককে টাকা আর ধান কর্জ দাদন দিয়ে অসিচি, এই আমাদের সাত পুরুষের ব্যবসা ! যে মহাজন খাতক চেনে না, ੇ মহাজন নয়। আপনি টাকা নিয়ে যান, দলিল দিতে হবে না।