পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ (t ૦ বিভূতি-রচনাবলী বরী নদী মরুভূমির মধ্য দিয়ে তিন শাখায় ভাগ হয়ে সাবলীল গতিতে বয়ে গিয়েচে । যে সময়ের কথা বলা হচ্চে তখন এই ত্রিস্রোতা নদীর প্রথম ধারাটিতে আদে জল ছিল না, মাঝের শাখাটিতে হাটুখানেক জল—তারপর মাইলটাক বিস্তৃত চড়া—তার ওপারে আসল ধারা, অনেকখানি জল তাতে । যাবার পথে একজন বন্ধুর কি খেয়াল হ’ল তিনি প্রথম ধারার বালির ওপর ঘোড়া থেকে নেমে চিৎপাত হয়ে শুয়ে পড়লেন—আর কিছুতেই উঠতে চাইলেন না। বাকি বন্ধুটি আর আমার ঠাকুরদাদা অগত্য তাকে সেখানেই বালুশয্যার শায়িত অবস্থায় ফেলে চল্লেন এগিয়ে। বলা বাহুল্য, তিনজনের মধ্যে কেউই ঠিক প্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছিলেন না । আমার ঠাকুরদাদা বড় ধারা অর্থাৎ আসল বরী নদীর কাছে এসে পেছন ফিরে চেয়ে দেখলেন তার বন্ধুটি ঘোড়া থামিয়ে বালির চড়ার পশ্চিম দিকে ভীত ও বিস্মিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন । ঠাকুরদাদা বল্লেন-ওদিকে কি দেখচ চেয়ে ? বন্ধু মুখে কিছু না বলে সেদিকে আঙুল দিয়ে দেখালে আর ইঙ্গিতে ঠাকুরদাদাকে চুপ করে থাকতে বল্পে । ঠাকুরদাদা চেয়ে দেখলেন, বালুর চরার ঠিক মাঝখানে অস্পষ্ট ধরণের কতকগুলি মহাযুক্তি-চক্রাকারে ঘুরচে ! কিছুক্ষণ চেয়ে দেখে মনে হ’ল ওরা যেই হোক, হাত ধরাধরি করে ঘুরে ঘুরে নৃত্য করচে । সেই নির্জন স্থানে রাত্রিকালে কাদের এমন আমোদ লেগেচে যে লোকচলাচলের অন্তরালে নৃত্য করতে যাবে বুঝতে না পেরে তারা দু’জনেই অবাক হয়ে রইলেন । কাছে কেউ কেন গেলেন না, সে কথা আমি বলতে পারব না, কারণ, শুনি নি। হয়তে। এদের মত্ত অবস্থাই সব দৃশুটার জন্য দায়ী, এই ভেবে তারাও কাউকে কথাটা বলেনওনি সেই সময়। এর পরে আরও বছর তিনেক কেটে গেল । ত্রিস্রোতা বরী নদীর প্রধান স্রোতোধারার তিন মাইল উত্তরে মরুভূমির মধ্যে একটা বড় লবণাক্ত জলের হ্রদ আছে, এর নাম 'নাহারা নিপট' অর্থাৎ ব্যাঘ্র হ্রদ। এই হ্রদের দূরে দূরে এ’কে প্রায় চারিদিক থেকে বেষ্টন করে পাহাড়শ্রেণী—এই পাহাড়শ্রেণী কোথাও হাজার ফুট উচু, কোথাও তার চেয়ে বেশী উচু। হ্রদ ও পাহাড় থেকে খনিজ লবণ পাওয়া যায় বলে কোটা দরবার থেকে মাঝে মাঝে এর ইজারা দেওয়া হ’ত ব্যবসাদারদের । আমার ঠাকুরদাদা পূৰ্ব্বোক্ত ঘটনার প্রায় তিন বছর পরে একদিন এই হ্রদের জলে বালিহাস শিকার করতে যাবেন ঠিক করলেন । গভীর রাত্রে বালি-হাসের দল হ্রদের জলে দলে দলে চরে’ বেড়ায়, একথা তিনি শুনেছিলেন। একটা ঘাসের লতাপাতার ছোট ঝুপড়ি বেঁধে তিনি তার মধ্যে লুকিয়ে থাকবেন দিনমান থেকে—কারণ মানুষ দেখলে হাসের দল আর নামবে না। সব ঠিকঠাক হ’ল, কিন্তু দু’একজন বৃদ্ধলোক নিষেধ করলে, রাত্রিকালে নাহার হ্রদের ত্রিসীমানাতেও যাওয়া উচিত নয়। কেন, তার স্পষ্ট করে কিছু বল্লে না—শুধু বল্পেজায়গাট ভালো নয়। ভৈজি নামে একজন বৃদ্ধ ভীল আমাদের প্রজা ছিল, সে বলে,—কোটা দরবারের নিৰ্মক মহালের ইজারাদার এক বেনিয়ার সে চাকর ছিল তার যৌবন বলে। উক্ত বেনিয়ার