পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ oo Y প্রতিমা স্থললিত ভজিতে জাচল সামলে নিয়ে বললে—ম ঠাকুরঘর থেকে বেরোন নি তো ? —বেশ, বেকতে হবে না। --বন্ধন, জল নিয়ে আসি বাবা, টেবিলেই খাবেন তো ? রায় বাহাদুর বিরক্তির সঙ্গে বললেন—রেডিওটা সৰ্ব্বদা ঝং ঝং করলে আমার মাথা ধরে যায়। কে খুলেচে রেডিও ? ছোট বৌমা বুঝি ? বন্ধ করে দাও—ও নাকি-স্বরে গান সৰ্ব্বদা বরদান্ত করতে পারি নে— রাতুলপুরেই যাবেন তিনি। অসহ হয়ে উঠেচে এ সংসার। শাস্তি বলে জিনিস নেই এখানে। একবার গিয়ে ঘুরে আসবেন প্রথম যৌবনের শত মধুস্থতিমাখা গ্রামটিতে। হয়তে নিরুপমার সঙ্গে দেখা হয়েও যেতে পারে—অন্তত সেই সব জায়গাতেও আবার গেলে জীবনের একঘেয়েমিটা কেটে যাবে। মাথা ধরেচে বেজায়। শুধু ওই রেডিওটার জন্যে। কতবার তিনি বারণ করেচেন-কিন্তু এ বাড়ীতে র্তার কথা কেউ আমলে আনে ? সাধে কি তিনি—শরীর কেমন ঝিম ঝিম করচে । মধ্য-রাত্রে বড় পুত্রবধু প্রতিমার ছোট খোকাটি জেগে মায়ের ঘুম ভাঙালো। প্রতিমা উৎকর্ণ হয়ে শুনলো দোতলায় শ্বশুরের ঘর থেকে কেমন যেন একটা অস্বাভাবিক গোঙানির শক আসচে। সে তখুনি নিচে এসে সকলের ঘুম ভাঙালো। রায় বাহাদুর বিছানায় গুটিশুটি হয়ে অস্বাভাবিক ভাবে শুয়ে আছেন, তার মুখ থেকে একটা অস্পষ্ট শব্দ বার হচ্চে। বড় ছেলে বাড়ী নেই। ছোট ছেলে ফোন করে দিলে ডাক্তারকে । তারপর নিজেও ছুটলো । খুব হৈ-চৈ উঠলো। সবাই ঝুকে পড়লো বিছানার ওপরে, বড় মেয়েকে আনতে মোটর ছুটলো বাগবাজারে। কি, চাকর, মেয়ের দল, পুত্রবধুর দল, নাতি-নাতনিরা মিলে লোকে লোকারণ্য ঘরের ভেতর । রায় বাহাদুর কি একটা বলচেন অস্পষ্ট গোঙানির মধ্যে—কেউ বুঝতে পারচে না । প্রতিমা কান পেতে ভালো করে শুনে বললে—নিরু কে ? নির কার নাম ? নিরু নিরু করে যেন কি বলচেন । ডাক্তার এসে বললে, স্ট্রোক হয়েচে । সেবাশুশ্রুষা চললো, বড় ছেলেকে টেলিগ্রাম করা হোল রংপুরে। সেখানে সে যুদ্ধের বড় কনট্রাক্টারির কাজে গিয়েচে । ট্রাঙ্ক-কল করা গেল মেজ ছেলেকে ঝরিয়ার কয়লার খনিতে । সেদিন বেলা বারোটার আগে রায় বাহাদুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।