পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ BĝÐ আমার ছশো মণ যোগাড় করে দিতে হবে আপনার । একটু নেকনজর করুন— কাৰ্ত্তিক তাকে আশ্বাস দিয়ে বাড়ীর মধ্যে ঢুকলেন চ খেতে। কাৰ্ত্তিকের স্ত্রী বললেন —ত যাও না একবার খোকাকে থিয়েটার দেখিয়ে জানো না ? পাড়াগায়ে ও সব জিনিস তো কখনো হয় না—এবার হচ্ছে যখন ওকে দেখিয়ে আনে ও কখনো দেখে নি । কাৰ্ত্তিককে অগত্যা যেতে হলো সন্ধ্যার সময় রামনগরের বাজারে, স্ত্রীর নিতাস্ত পীড়াপীড়িতে। নতুবা ঝগড়া বাধে। কিন্তু মন তার ভাল ছিল না। কর্মচারীরা সংবাদ দিয়েচে দাদনের পাট আশানুরূপ আদায় হয় নি। প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা ছড়ানো রয়েচে চাষী মহলে ধান আর পাটের দাদন বাবদ । এত দুর্ভিক্ষের সময় চড়া দামে ধান চাল বিক্রি করে মোট টাকা ঘরে এসেছিল বলেই এবার আশায় আশায় এত টাকা ছড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু বাজার হঠাৎ নেবে যাবে বুঝতে পারা যায় নি। ধানের দামও অত্যন্ত কম, পাটও তথৈবচ। তারপর অতগুলো ছড়ানো টাকার বদলে ধান বা পাট আদায় হোল না আজও । নীলু দুধ-চি ড়ের ফলার খেয়ে এসেচে। ছেলেমামুষের ক্ষিদে বেশী । কাৰ্ত্তিক কিছু খেয়ে আসেন নি, তিনি অর্থ উপার্জন-শক্তি অর্জন করবার সঙ্গে সঙ্গে পরিপাক-শক্তি হারিয়েছেন। রাত্রে খান দুখানা রুটি আর একটু দুধ । আগে খেতেন স্বজির রুটি কিন্তু এখন যুদ্ধের বাজারে ঘনীভূত অবস্থায় মুজি পাওয়া যায় না, আটার রুটিই খেয়ে থাকেন। সন্ধ্যার পরেই থিয়েটার আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু চ্যাংড়া ছোকরাদের ব্যাপার, হৈ চৈ করতে দুঘণ্টা কাটবার পরে রাত সাড়ে নটার সময় কনসার্ট বাজনা শুরু হলো । একালের থিয়েটারে ও সব আচল বলে কোন শহর-ঘেষা অতি-আধুনিক তরুণ সভ্য আপত্তি তুলেছিল। শেষ পর্য্যন্ত আপত্তি টেকে নি। কনসার্ট না বাঙ্গলে এ পল্লীগ্রামে থিয়েটার জমবে কেন ? কাৰ্ত্তিক ছেলেকে নিয়ে একেবারে সামনের আসনে বলেচেন । তার কারণ এ নয় যে তিনি ভালোভাবে অভিনয় দেখতে পাবেন সেই উদ্দেশ্যে। এর প্রধান কারণ রামনগরের ৰাজারের প্রসিদ্ধ আড়তদার শরৎ নাথ ওখানে বসেছে। শরৎ নাথ এ অঞ্চলের বড় আড়তদার, তার পাশে বসে কাত্তিক মজুমদার ব্যবসায়ের কথা বলতে আরম্ভ করলেন।. তিনি আসলে জানতে চান শরৎ নাথের দাদন অনুযায়ী পাট ধান আদায় হচ্ছে কিনা। কেন এ বৎসর তার এ বিপৰ্য্যয় ঘটলো । { } শরৎ নাথ ঘুঘু লোক, তিনি ব্যবসার প্রকৃত সংবাদ কাউকে প্রকাশ করতে রাজী নন। দুজনেই যখন কথাবার্তায় মশগুল তখন স্টেজে বন্দী অক্ষম সাজাহান জাহানারার হাত ধরে বিলাপ করচেন । শরৎ নাথ বললেন–জার ভায়া, সে জুত বাজারের নেই। নতুন ধান সাড়ে তিনটাকা মণ। আলমপুর পরগণা ভোর পাটের দান ছড়িয়েচি, দুশোমণ পাট এখনো মজুত হয় নি ৯