পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©8& বিভূতি-রচনাবলী রূপলী নববধুর মুখের মত উকি মরচে রাঙা টকটকে সুঠাম হুগোল ফলগুলি । এই দুটি মাকালকোপ আমার কাছে কি অপুৰ্ব্বই লাগে ! নদীর ধারেরটিও এই বটতলার । নদীতীরের ঝোপ স্বষ্টি হয়েচে এক নিবিড় লতাবিতানের নিভৃত ছায়াগহন আশ্রয়ে । একটা গাই-বাবলা গাছের মাথায় মাকাল-লত উঠে জড়িয়ে জড়িয়ে এই কোপ তৈরী করেচে। সাইবাবলা গাছ এমন স্বন্দর, যেখানে থাকে সেখানে দাড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে না দেখে থাকা যায় না । সরু সরু লম্বা পাতা, আঁকা বাকা শাখা প্রশাখা, ভাদ্রমাসে সাদা মঞ্জরীর মত ফুল হয়েচে একসঙ্গে বহু, আর ওদের মুখ থাকে নীল আকাশের পানে উচু হয়ে। তারই ওপরে সেই মাকাল-লতার ঝোপ—আর মাথা থেকে ঝুলে ঝুলে পড়েচে এদিক ওদিকে মাকাল-লতার দীর্ঘ ডালগুলি, আর তার প্রতি গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে, লতাগ্রভাগে, সবুজ পত্রান্তরালে চিকণ খাম অথবা লাল টকটকে মাকাল ফল । এর অদ্ভুত সৌন্দর্ঘ্যের জন্তে পটভূমি রচনা করেচে পাশে বড়গোয়ালে-লতার আর একটি বড় ঝোপ—একদিকে একটা আম্রবৃক্ষের নত শাখা, দশ বর্গফুট আন্দাজ স্বনীল আকাশ আর গাছের তলায় শেওড়া, বৈঁচি, ভাট, বনকচু, বনআদ, সন্ধ্যামনির নিবিড় জঙ্গল। প্রভাতের অপূৰ্ব্ব রৌদ্র পরিশ্রুত হয়ে আসে বড়-গোয়ালে-লতার বড় বড় পানের মত পাতার মধ্যে দিয়ে, ওই পাতার উন্টে পিঠগুলো যেন স্বচ্ছ দেখতে স্বৰ্য্যকিরণে, একটি সজল ছায়া বিস্তৃত হয়ে আছে বনতলে, মেঘনগরীর উদ্ধের নীলাকাশ তার বাণী পাঠিয়েচে তার ওই দশ বর্গফুট বয়সের প্রতিনিধির হাতে । শালিক, ছাতারে, ঘুঘু, দোয়েল, নীলকণ্ঠ, খাম, দুর্গ, টুনটুনি প্রভৃতি পক্ষিকুলের সম্মিলিত প্রভাতকাকলীতে মুখর হয়ে উঠেচে বনবাণী । এরই মধ্যে সুদীর্ঘ নম্রমুখ লতা যেখানে মাটি ছুয়ে দুলচে, সেখানে লতার প্রতি গ্রস্থিতে দুলচে রাঙা টুকটুকে মাকাল ফল। ভাদ্রমাসে বেশির ভাগ মাকাল ফলই পেকেচে, কচিৎ হচারটে কাচা আছে। - এই মাকালঝোপ কি জাদু জানে। বোধ হয় কোন ঐন্দ্রজালিক লুকিয়ে থাকে ওর খাম বনানীর অন্তরালে, মানুষের মনকে মোহগ্ৰস্ত করে ফেলে এক মুহূৰ্ত্তে—যে মুহূর্তে বনতলে ছায়ায় গিয়ে দাড়ানো যায় সেই মুহূর্তেই। কোন অসাধারণ ঐন্দ্রজালিক আর তার ইন্দ্রজাল এ! এই স্বত্র আকৃলিলতার ঝোপে আমার মন কেন মােহাবিষ্ট করে তার কারণ আমি জানি নে বললে কবিজনোচিত ধোয়াটে বর্ণনা দ্বারা জিনিসটাকে ঘোরালো করা যেতো । কিন্তু এর কারণ আমি জানি । कि छांनि ? তাই কি বিশ্লেষণ করে বলার কথা ? ঝোপের পাশে দাঁড়ালুম সেদিন প্রভাত বেলায়। কাধে গামছা, হাতে সাবানের বান্ধ, ইছামতীতে বনলীমতলার ঘাটে স্বান করতে যাচ্ছিলুম। ইচ্ছে করেই খুর পথ দিয়ে গেলাম শুধু এই মাৰাল ফলদোলানো দেখবো বলেই।