পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

egty विङ्कङि-ब्रह्माबजो কৃপা ও প্রশ্রয়ের স্থিতহাস্তে দক্ষিণপাণি প্রসারিত করে গ্রহণ করেচেন অক্ষমের লে স্ততি । ‘ওমিক্রন সেটি'র অগ্নিলীলার মধ্যে এই গোল গোল রাঙা মাকাল ফলের স্বপ্ন লুকানো আছে। 'ওমিক্রন সেটির চারিপাশে ঘূর্ণ্যমান গ্রহরাজি যদি থাকে, যদি সেখানে অনন্তযৌবনা দেবকস্তারা সে দেশের বনবীথির অন্তরালে, সেখানকার অজ্ঞাত বসন্তদিনে অলস শয়নে শুয়ে দিনপাত করেন, কে জানে সেই বনবীথির মাঝে এমন মাকাল-লতা, এমন দোদুল্যমান ফলগুচ্ছ, ঘনসবুজ ঝোপের অন্তরালে এমন টুকটুকে রাঙা ফল হয়তো আছে। মাকাল ফলের আয়ুষ্কাল বেশী দিন নয়, একমাস দেড়মাস। স্বপক অবস্থায়ও দিন-পনেরো গাছে দোলে, তারপর একদিন ঝরে পড়ে যায় । তাই রোজ দুবেলা যেতাম মাকাল ঝোপের তলায়—একমাস দেড়মাস ধরে কত রূপে একে দেখেচি—এই লতাবিতানকে । প্রভাতের আলোতে, ঘনবর্ষার মেঘমেদুর সন্ধ্যায়, নির্জন ভাদ্র দ্বিপ্রহরে নিস্তব্ধ প্রশাস্তির মধ্যে উদার নীলাকাশের তলে ঘুঘু ডাকা উদাস বনানীর পটভূমিতে, স্বন্দর জ্যোৎস্নারাতের প্রথম প্রহরের জ্যোৎস্নায়। বাবলার হলদে ফুল আর সাই-বাবলার ফুলের শিষ, তার মধ্যে দুলে দুলে হলদেডানা সাদী-ডানা প্রজাপতির মেলা, তার মধ্যে দোদুল্যমান মাকাল-লতার নিবিড় ছায়াগহন আশ্রয়, তপোবনের ন্যায় স্নিগ্ধ, পবিত্র। খানিকটা সেখানে দাড়ালেই সৌন্দর্ঘ্যে অভিভূত হয়ে পড়ি, কেমন যেন সারাদেহ শিউরে ওঠে, মন অপূৰ্ব্ব ভাবে ও স্বপ্নে বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে—এ আমি এই গত এক মাসের মধ্যে অন্তত ছ সাতদিন দেখেচি । সে স্বপ্ন কিসের কি করে বলবো, আম্রশাখা ও সাই-বাবলার ফুলে ভরা শাখার পিছনকার নীল আকাশেয় স্বপ্ন, কোনো মহাশিল্পী মহাদেবতার প্রত্যক্ষ আবির্ভাবের স্বপ্ন, সবুজ ঝোপের মাথায় ফলন্ত রাঙা মাকাল ফলগুলির স্বপ্ন—গভীর সৌন্দর্ঘ্যের স্বপ্ন। পাগল করে দেয় ওই স্বপ্ন । আমি জানি, তেমন ভাব ও স্বপ্নালুত সারা বছরে একদিন এলেও জীবন ধন্য হয়ে যায়—তাই এই মাকাল-লতার লীজ নএ এল মাসে সাতদিন । এ মাকাল লতার ঝোপ যেন পবিত্র দেবায়তন, অতি পবিত্র অতি স্বন্দর। সৌন্দর্ঘ্যের পূজারী যে, এই দেবায়তনে দেবতার আবির্ভাব সে দর্শন করবে। এখানে জাগ্রত ও প্রত্যক্ষ দেবতাকে নিত্য প্রণাম করবে । জয় হোক মাকাল ফলের ! জয় হোক ‘ওমিক্রন সেটি'র। কত বড় ও কত ছোট। কিন্তু উভয়ের মধ্যেই আর্টিস্টের আবির্ভাব অতি প্রত্যক্ষ, অতি বিচিত্র। যায় মন খারাপ হয়েচে সে অমৃতের সাগরে এসে তীৰ্থজল আহরণ করুক। প্রত্যক্ষ করুক ঋগ্বেদের শিবরুদ্রীয় স্তোত্রের অমর বাণী। বৃক্ষের পত্রেও তুমি, পত্রের পতনেও তুমি। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি মাকাল ফল ঝরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে, মাকাল-লতার খাম শোভা অন্তৰ্হিত হবে, বনভূমি আগামী বৎসরের শ্রাবণদিনের প্রতীক্ষায় থাকবে—ম্পক মাকাল ফলের আবির্ভাবের প্রতীক্ষায়। ঝরঝর বাদল দিনের অপরাহ্লে আবার এদের দল আসবে ঘুরে, যেমন এর আসে প্রতি বর্ষা ঋতুতে, কত বৎসর, কত শতাব্দী, কত যুগ ধরে...আনস্তের সসীম প্রতিনিধির মতো-কেউ খবর রাখে, কেউ রাখে না ।