পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՓՆ বিভূতি-রচনাবলী খাই ? হুকুম করে – আমার অনুমতির প্রয়োজন কি, বুঝলাম না। তবু বললাম—বারে, খাও, আমি কি বলবো? খাও—শুধু ভুমুত্র-ভাতে খেতে পারবে ? —কেন পারবো না, বাবাঠাকুর । একটা যা হয় হোলেই হোলো । জিবের স্বখ যত বাড়াবে, ততই বাড়ে। ওর মধ্যে কিছু নেই। কে হাট-বাজারে ছোটে দুটো খাওয়ার জন্তে ? জঙ্গলে গুরু-গোসাই সব করে রেখেচেন। ডুমুর আছে, তেলাকুচো ফল আছে— আমি আশ্চর্ধ্য হয়ে বললাম—তেলাকুচো ? —ই বাবাঠাকুর, তেলাকুচে ভাতে খুও, ভাজা খাও, তেলাকুচোর পাতা ভাজা খাও— দিব্বি জিনিস। পেয়ার-ভাতে ভাত খেয়ে একমাস কাটিয়ে দিই। উঠোনে ওই স্থাখো পেয়ার গাছ । পেয়ারা হয় নি, তাহলে তোমায় দিতাম । কেন যাবো বলো হাটে-বাজারে ? —তোমার উঠোনে তরি-তরকারি কর না কেন ? —বডড খাটতে হয় ওর পেছনে বঞ্চাট । কে অত ঝঞ্চাট করে ? সে সময়টা গুরুগোসাইয়ের নাম নিলে কাজ হবে। ওই শসার গাছ করা হয় শুধু গুরু-গোসাইয়ের সেবার জন্যে । পাগল ঠাকুর খেয়ে উঠে এটো পাতা ফেলে দিলে। রাজ্যির কুকুর জড়ো হয়েছিল আগে থেকে, পাতের অনেকগুলো ভাত ওদের সামনে ছড়িয়ে দিলে। আবার তামাক সাজতে বসলো। তামাক খেতে খেতে বুড়ীকে বললে—পাকাটি স্থাও গোটাকতক, একটা মশল করি। আমি বললাম—কি হবে ? —এখুনি আবার বুনোপাড়ায় যেতে হচ্চে । দুটো রুগী এড়িয়ে আছে, দেখে এসেচি। তাদের ফেলে থাকতে পারবো না । নবীন ডাক্তারকে বলে এসেচি যুাবার জন্তে । এখন গুরুগোসাইয়ের কৃপা হোলে সেরে উঠতে পারে। আর তিনি যদি চরণে টানেন—তবে হয়েই গেল —জাহ-হ ! ওর চোখে প্রায় জল এসে পড়লো। আমার হঠাৎ বড় উদ্বেগ হোলো ওর জন্যে ও ষেন আমার আত্মীয় কত কালের । আমি দাড়িয়ে উঠে বললাম—তুমি যেও না সেখানে। যদি তোমার হয় ? বড় খারাপ রোগ পাগল ঠাকুর হেসে বললে—ওই তাখে, বাবাঠাকুরের কথা—ষ্ঠার নিয়ে সব । তার যদি ইচ্ছে হয় এই খোলসটা বদলাবো, তবে তাই হবে । তিনি যেখানে নিয়ে যাচ্চেন, সেখানে ষেতেই হবে । আমি তে যাচ্চি নে, তিনি নিয়ে যাচ্চেন,—তাই যাচ্চি। আমি কেউ নই। একটা অদ্ভুত ভাব ওর মুখে ফুটে উঠলো কথা ক'টা বলবার সময়। বুড়ী বললে—রাত্তিরে ফেয়ব তো ? ও বললে—ত বলা যায় না। তুমি কাপ খুলে রেখে, আমি তো বাপ খুলে ঢুকবে। চলো ৰাবাঠাকুর, সঙ্গে হয়েচে, তোমায় পৌঁছে দিয়ে ওই পথে চলে যাই।