পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কওঁ ፀቆç বাদল নেমেছে—মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ইন্দু রায় ও হাবু ফুচুকে সঙ্গে নিয়ে মাছ ধরতে যাই । হাবু ও ফুচুর সঙ্গে কালও গিয়ে কাচিকাটার পুলের নীচে কচুৰিপানার জড়ো করা ভূপের উপর বসে আরামডাঙার খামল মাঠ ও খেজুর গাছের সারিরদিকে চেয়ে মনে হলো এ যেন ঠিক সেই বিলিতি ছবিতে South-sea Island-এর দৃশ্য দেখচি। বর্ষী-সতেজ কচি টোটরা ঘাসগুলো জলের ধারে কেমন বেড়ে উঠেচে আর তার কি শোভা । একটা রাখাল ছোড়া মরাগাঙের ধারের ক্ষেত থেকে কাকুড় তুলে থাচ্চে দেখে হাবু তাকে কেবল বলতে লাগলো—ও ভাই, একটা কাকুড় দে না তুলে ক্ষেত থেকে। অনেক অনুরোধ উপরোধে সে একটা মাঝারি সাইজের কঁকুড় তুলে নিয়ে আসতেই হাবু ও ফুচু সেটার ভাগ নিয়ে ঝগড়া বাধালে। প্রবহমান ক্ষীণকায়া তটিনীর কুলে বসে পুটিমাছ ধরা ছোট ছিপ ফেলে মাছ ধরি আর কাচা কঁকুড় খাই—বেশ লাগে এ জীবন ! আজ বেলা তিনটের সময় ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি ও সেই সঙ্গে ঝড়। ঝড়বৃষ্টির কোনো কামাই নেই আষাঢ় মাস পর্য্যন্ত । দিনগুলি ঠাণ্ড, সজল বাতাস বয় সারাদিন । আজ মেঘবৃষ্টির পরে বেড়াতে বার হই বাওড়ের ধারের পথ দিয়ে নতিডাঙার সেই বটগাছটা পৰ্য্যস্ত। সেই বিশাল প্রাচীন মহীরুহ তার ঘন সবুজ শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আছে মজা নদীর ধারে, দূর বিস্তৃত মাঠে আউশ ধানের জাওলা বেড়ে উঠেচে, যেদিকে চাই সেদিকেই ঘন খাম ভূমিত্ৰ—আর সকলের ওপর উপুড় হয়ে আছে আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ। কি নব নীল নীরদ-মালা, দেখে মনে হল তখুনি বিশ্বশিল্পীর এ শিল্প আমি যদি না দেখি, তবে এ পাড়াগায়ের কেউই আর দেখবে না । শিল্পী হিসাবে, কবি হিসাবে আমার কর্তব্য হচ্চে এই অদৃপ্ত সৌন্দর্ঘ্যের অপরাজিত আয়তনের সঙ্গে ভাল করে পরিচিত হওয়া । মেঘের কোলে এক জায়গায় সাদা বক উড়চে—ঠিক বেলেডাঙার পুলটার কাছে। খেজুর গাছ আছে একটা সেইখানে ছেলেবেলা থেকে দেখে আসচি। অবাক হয়ে গেলুম উড়ন্ত বক দুটিকে সেই বর্ষার মেঘ থমকানো অপরাহ্লে কাজল কালো মেঘের গায়ে উড়তে দেখে । জগতে এত সৌন্দৰ্য্যও আছে। কোথায় এর তুলনা ? ধন্যবাদ হে মহাশিল্পী, তুমি আজ আমাকে তোমার স্বই রূপজগৎকে দেখবার স্থযোগ দিলে। এর ভাষা সৌন্দর্ঘ্যের ভাষা, কি বলতে চায় এ মুখর প্রকৃতি—এই বন, মেঘ, তৃণাবৃত প্রাস্তর, উড়ন্ত বক, খেজুর গাছের সারির মধ্যে দিয়ে নীরব গম্ভীর ভাষায়, তা যে কান পেতে শুনতে চায় সে শুনতে পাবে। কিন্তু ঐ যে বাগদীরা মরগাঙের ধারে বসে মাচা বেঁধে সারি সারি জলি ধান পাহারা দিচ্চে—ওরা কেউ শুনতে চায়ও না, পায়ও না । সকালবেলা আজ বাওড়ের ধারের পথে বেড়াতে গেলুম । নীল আকাশ, গাছপালার প্রাচুর্য, বনবিহঙ্গের কুজন আমার মনকে অপূৰ্ব আনন্দ রসে অভিষিক্ত করে রাখলে। একস্থানে বলে চারিধারে চেয়ে চেয়ে দেখি—কি চমৎকার অপরূপ সৌন্দৰ্য্যশিল্প ভগবানের। কুঠার মাঠে পেয়ারা গাছটার তলায় এসে বসলুম নরম সরস সবুজ ঘাসের ওপর গামছা পেতে যেন কত বন, এমন সবুজ তেলাকুচা লতার সাদা সাদা ফুল ও কলমলে স্বৰ্য্যালোকে প্রজাপতির