পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কও 8 ed শাস্ত, অনাড়ম্বর জীবনধারা চলচে । কাল উষার পত্র পেলুম লাহোর থেকে, ম্যাট্রিক পাশ করেচে খবর দিয়েচে । স্বধী হলুম খবর পেয়ে। সামনের শনিবারে পাথুরেঘাটার অক্ষয় ঘোষের ছোট মেয়ে বুড়ির বিরে। সেখানে নিমন্ত্রিত আছি, যেতে হবে শনিবারে । ক'দিন ভীষণ বৃষ্টির পরে আজ দুদিন আকাশ একটু পরিষ্কার হয়েচে । গত শনিবার ২৬শে শ্রাবণ অক্ষয়বাবুর মেয়ে ছোট বুড়ির বিয়ে হয়ে গেল—সেখানে রামজোড়, ছট. সিং, সরণপ্রসাদ, যুগল তাদের সঙ্গে দেখা । বহুদিন পরে ইসমাইলপুরের সেই আবহাওয়া যেন ফিরে এল । আগামী শনিবারে এখান থেকে ঘাটশিলা যাবে, হুটু চিঠি লিখেচে । পরশু ফণি কাক মাছ ধরতে গিয়েছিল মুন্দরপুরের নীচে মরগাঙে, আমি তার খোজে স্বন্দরপুর পর্য্যন্ত গিয়েছিলাম। ওপথে অত দূর অনেকদিন যাইনি। বন কলমীর ফুল ফুটেচে ঝোপের মাথায়, চারিধার ভরপুর সবুজ, কি অদ্ভুত শোভা ঝোপগুলির । এই ঝোপ-ঝাপ এ অঞ্চলের একটি বৈশিষ্ট্য—এর সৌন্দর্ঘ্য বর্ষাকালে যে দেখবে সে মুগ্ধ হবে। আর আমার সেই পেয়ারাগাছের তলাটা । সেখানে ছোট ছোট পাতাওয়ালা ভ্যাদলা-স্বাস হয়েচে, যেন সবুজ মখমলের আসন বিছানো, মাথার ওপর নত হয়ে আছে পেয়ারা ডালটি । স্বরেনদের বাড়ীর পেছনে আর একটা ঝোপে বনকলমী ফুটেচে দেখে সেদিন আমি আর চোখ ফেরাতে পারিনে । বিশ্বশিল্পীর এই অপূৰ্ব্ব স্বষ্টির ও সৌন্দর্য্যের প্রকাশ মনের গভীর অস্তস্তলে সচেতন ভাবে গ্রহণ যে করতে পারে, এ পৃথিবী, ফুলফল, নীল আকাশ, উদার ভূমিশ্ৰী তার কাছে আপনরুপে ধরা দেয় । কাল কলকাতা গিয়েছিলুম—সকালে গিয়ে রাত ন’টায় ফিরি। আজ ক'দিন থেকেই আমাদের ঘাটে নাইতে গিয়ে সাতার দিয়ে চলে যাই, কুলে কুলে ভরা নদীর ধারে বনঝোপ, সাইবাবলা গাছ, নীল আকাশ, শরতের রোদ, ঘুঘুর ডাক—সত্যিই যেন বহুকাল পূর্বেরই বিশ্বত বাল্যদিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সাতার দিয়ে বঁাশতলায় উঠি, তারপর নিভৃত বনচ্ছায়ায় একস্থানে একটি বনকলমী ফুলের ঝোপের কাছে বসে রইলুম, ওদিকে কি একটা গাছের মাথায় মাকাল লতা উঠে কেমন একটা চমৎকার ঝোপের স্বষ্টি করেচে। রোদ না থাকলে, নীল আকাশ না থাকলে কি শরৎ মানায় ? এতদিন শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি ! গরম রোদ হবে, লতাপাতার কটুতিক্ত গন্ধ বার হবে, তবে শরতের স্বপ্নলোক নামবে নীল আকাশের অনন্ত মুক্তির চন্দ্ৰাতপতলে । * আজ কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে সেই পেয়ারা গাছটার তলায় চুপ করে বলি–গাছ উঠিও। গাছে উঠলে যেন অন্ত মাম্বব হয়ে যেতে হয়—বস্ত-প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ .কে আরও নিবিড় আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিবারণের দুই থেকে জলে নামলুম ও সাতার দিতে দিতে কত নল-খাগড়ার বন, ভাসমান কচুরিপানার দাম, কলমীলতার পাশ কাটিয়ে