পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ye বিভূতি-রচনাবলী সামনে চেয়ে দেখি উক্ত স্ব শৈলগাত্রের গায়ে থাকে থাকে ঘনশ্যাম বনানী, রাঙা পাথর ও মাটির ক্ষয়িত পৰ্ব্বতগাত্র, অনেক উচুতে বড় বড় বট অশ্বথের মত বনস্পতি, তার ওপরে শরৎ দুপুরের নীল আকাশ, পাশেই বিশাল হিডনি প্রপাতের তুলোর বস্তার মত দ্রুত নীয়মান জলধারা, তার ডানপাশে আবার বন, তার নীচে ল্যাণ্টান ক্যামেরার জংলী রঙীন ফুল। ছায়া পড়েচে মেঘের—অন্য কোনো শব্দ নেই, শুধু জলপতন ধ্বনি দ্বারা বিখণ্ডিত নৈঃশব্দ আর বনবিহঙ্গ কাকলী। প্রকৃতির এমন নিভৃত লীলা নিকেতনে মন হৃষ্টমুখী হয়ে ওঠে, বিশ্বের স্রষ্টার অপূৰ্ব্ব রহস্তের দিকে মন যায় চলে—এখানে মানুষ ছোট হয়ে গেছে—এই আকাশ, এ কোয়ার্টজাইটের চাই বাধানো স্ববিশাল শিলাসন, এই বনানী, এই ফেনপুঞ্জবাহী দ্রুতপতনশীল জলধারা— এরাই বড় | g পরেশবাবু সেখানে বসে গান গাইছেন । মিঃ সিনহা ডায়েরী লিখচেন—স্থবোধ সৰ্ব্বদা ব্যস্ত, সে চলে গিয়েচে মোটরে । কল্যাণীকে একবার আনতে হবে এখানে । কতদূর এখান থেকে বারাকপুর, কুঠার মাঠের আমার সেই পেয়ারাগাছের তলাটা, কুলে কুলে ভরা ইছামতী ও তার তীরে কাশের ফুল ফোটা চরভূমি ! সেই আমাদের নৌকো করে বনগায়ে যাওয়া আজ যেন স্বপ্ন বলে মনে হয় না কি ! সত্যিই মনে হচ্চে কে যেন আমার হাত ধরে দেশে বিদেশে নিয়ে নিয়ে বেড়াচ্চেন নতুবা তো গ্রামে বসে বারিক মণ্ডল ও ফণিকাকার সঙ্গে ধান বোনার গল্প করতাম, হরিপদদার সঙ্গে মোকদ্দমার ষড়যন্ত্র করতাম । ভগবানকে এজন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ । তারপর কি চমৎকার রাস্ত দিয়ে মোটরে এসে বসলুম। স্ববোধবাবু যে রাস্তা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে রাস্ত এটা নয়, এপথে বড় বড় বনস্পতির ঘন ছায়া—এক ক্ষুদ্র ঝর্ণার ওপর পাথরের সাকে, একটা শিউলি গাছে যথেষ্ট কুঁড়ি ধরেচে। যেন ঋষির পবিত্র তপোবনের স্থান। তারপর চারিদিকে উচু উচু পাহাড়ের শোভাও অদ্ভূত। মোটর চললো কালকার রাত্রের বনভূমি ভেদ করে। বনকলমী ফুল আরও কত কি ফুল বনের মধ্যে ফুটেচে এই বর্ষা শেষে। ২• • • হাজার ফুট উচু টেবো বাংলোর ধার দিয়ে গাড়ী চলেচে—পাশে বর্ষার উদাম এক পাহাড়ী নদীর গৈরিক জলধারা। শিউলি গাছ মুকুলিত হয়েচে এ বনেও । স্ববোধকে বলি—সাহিত্যিকদের জন্য আপনারা P. W. D. থেকে এখানে একটা বাংলো তৈরি করে দিন না! . যেখান থেকে সমতলভূমির দৃশ্ব স্বন্দর দেখা যায়, সেখানেই এ কথা উঠলো। জলতেষ্ট পেয়েছিল, রাচি রোডে নেমে নাকৃটি বাংলোতে এসে গাড়ী থামিয়ে জলের সন্ধানে গেল ড্রাইভার। বেলা তখন একট, কিন্তু ডাকবাংলোর চৌকিদারের টিকি দেখা গেল না কোথাও । তখন জলের আশা ছেড়ে দিয়ে চক্ৰধরপুরে এসে জল খাওয়া গেল, নগেনবাবুর ছেলে জল নিয়ে এল । রাত্রে স্থবোধবাবুর বাড়ী দু’চারটি ভদ্রলোকের সামনে গল্পপাঠ করলুম।