পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Sy s विङ्कडि-ब्रळ्नांवली থলকোবাদ বাংলোতেও শুনেচি। কোথায় একটা সম্বর হরিণ পূৰ্ব্বদিকের পাহাড়ে গম্ভীর আওয়াজ করলে । মাথার ওপরে দু-চারটে নক্ষত্র, সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখা যাচ্চে । টিলার দক্ষিণে যে শালবন, তার শিশিরসিক্ত পত্রপুঞ্জ জ্যোৎস্নায় চক্‌চক্‌ করচে। ডাইনে একটা গাছের গায়ে বন্যহস্তী তাড়ানোর উচু মাচা । এই গভীর রাত্রে অরণ্য-নিঃশবতার মধ্যে—দূরবর্তী অপরিচিত পাহাড়ী ঝর্ণার জল-পতনধ্বনি ও দু-একটা নৈশপাখীর কুজন দ্বারা বিখণ্ডিত যে গম্ভীর নৈঃশব্য, এর মধ্যে কান পেতে থাকলে যেন কার বাণী শুনতে পাওয়া যায় । শুনলামও তার বাণী, শুনে সারা হৃদয় মন জয়ধ্বনি করে উঠলো সেই বিরাট স্ৰষ্ট, সেই সৌন্দৰ্য্যশিল্পী, সেই রহস্যময় অনস্তের উদ্দেশে! মুখে কিছু বলা যায় না। পনেরো মিনিট বাইরে ছিলাম এই পৌর্ণমাসী রজনীর মায়াময় জ্যোৎস্নালোকে বাংলো থেকে কিছুদূরে বনের মধ্যে টিলার ওপরে দাড়িয়ে, যেখান থেকে বাংলোর সাদা বাড়ীটা বা কোনো লোকালয়ের চিহ্ন চোখে পড়ে না, শুধু মনে হয় এক এক আমি এই জনহীন গভীর বনভূমিতে এই গভীর রাত্রে আকাশ ও বনের দিকে চেয়ে আছি –এই পনেরো মিনিটে পনেরো বছরের জ্ঞান সঞ্চার হোল । চোখ যেন খুলে গেল । তার জয় হোক । সকালে উঠেচি–মিঃ সিনহা ডেকে বরেন—ময়ূর দেখুন ! পাশের উপত্যকায় মাঠের মধ্যে ছ সাতটি বড় বড় ময়ূর দেখে বড় খুশি হই। বেলা দশটার সময় মোটরে বার হয়ে আমরা কোলিবাদ ১৫-এর ঘন জঙ্গলে গেলুম। কায়াউলি নামক একটি ক্ষুদ্র নদী প্রথমে পেলুম। বড় বড় পাথর বাধানো জায়গা। পাথরের ওপর দিয়ে নদী বয়ে চলেচে। বনের পথে নামচি উঠচি—দুধারে শৈলশ্রেণী—আবার এক বর্ণ । তারপর কোইনা নদী ঘন বনের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে । কোইনা নদীর পাষাণময় তীরের ঘন বনের ধারে বসে আমি ১৯৩১ সালের ব্ল্যাকউডস ম্যাগাজিনে "Cast adrift in the woods’ বলে একটা ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়তে লাগলুম। মাঝে মাঝে মুখ তুলে চেয়ে দেখি ঝোপ ও লতা দিয়ে তৈরি নিবিড় বন যেন বাংলাদেশের বনের পদ্ধতি-বিশিষ্ট–যেন কুঠী মাঠের বন—শুধু শাল আসান নয়। পথে তিন রকমের ফুল অজস্ৰ ফুটে—দেবকাঞ্চন, বন্য পিটুনিয়া ও ঈষৎ স্বগন্ধ-বিশিষ্ট এক রকমের হলদে ফুল, বেশ দেখতে । কামিনী ফুলের গাছ জঙ্গলের মধ্যে যথেষ্ট । সকালে চমৎকার আলোছায়ার খেলা জঙ্গলে—নিবিড় ছায়ার ফঁাকে ফাকে স্বৰ্য্যালোক এসে পড়েছে, বন্য-পক্ষীর কুজন, কোইন নদীর মৰ্ম্মর কলতান, বামে নদীর ওপারে প্রায় দুশে গজ দূরে পাহাড়শ্রেণী কি স্বন্দর লাগছিল। ভগবানকে মন থেকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা হয়। আরও কিছুদূরে গিয়ে কোইন নদী আর একবার ঘুরে আমাদের পথে এসে পড়ল—এখানে একদিকের পাড় উচু ও প্রস্তরময়, নিবিড় বনাবৃত। এখানে অনেকক্ষণ বললুম। কমলালেবু দিলেন মিঃ গুপ্ত। কি পাখীর গান। কি বনানীশোভা । ভূতধাত্রী ধরিত্র অপূৰ্ব্বক্ষপে সজ্জিত এই ঘনবন পৰ্ব্বতাস্তরালে। আজ সকালে উঠে ঘন বনের পথে মিঃ সিন্‌হা, মিঃ গুপ্ত ও আমি রওনা হই ৰোলাই