পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8$ e विफूडि-ब्रफ़नांयणैौ ঘেরা। শুধুই বনস্পতির সমারোহ, শুধুই বনশীৰ্ষ, শুধুই সবুজের মেলা ; একটা কুসুম গাছের তলায় আমরা বসলুম। বনের মধ্যে কর্কশস্বরে কি পাখী ডাকচে। ফরেস্ট গার্ডকে বললুম— ময়ূর ? সেখল্পে—নেছি হুজুর, ধনেশ পার্থী। বড় বড় ঠোঁটওয়ালা ধনেশ পার্থী দেখেচি বটে, কিন্তু দেখেচি কলকাতার খাচায় বন্দী অবস্থায় । এমন ঘন বনে তার আদিম বাসস্থানে, উড়িষ্যার বোনাই স্টেটের অরণ্যে ওর ডাক শুনবে, এ ভাগ্য কখনো হয়নি। ভেবে দেখলুম যেখানে বসে আছি, নিকটতম রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪০ মাইল—এও জীবনে কখনো ঘটেনি! কলকাতায় যেতে হোলে এখান থেকে কদিনের হাটাপথে গুয়া বা জেরাইকেল গিয়ে ট্রেনে চড়তে হবে । বসে আছি, আমাদের সামনের সরু পায়ৈ-চলা পথ দিয়ে এক কৃষ্ণকায় তরুণ দেবতার মত যুবক, হাতে-বোনা খাটো মোট কাপড় পরলে, এক হাতে তীরধন্থ, অন্ত হাতে একটা পুটুলিতে কি বাধী—মাথায় লম্বা লম্বা কালো চুলে কাঠের চিরুনি গোজা—ব্যস্ত ও চঞ্চলভাবে কোথায় চলেচে । আমরা ডাকলুম ওকে। সে বল্লে, গির্জায় যাচ্চে, বড় ব্যস্ত। হে ভাষায় বল্লে—মিঃ গুপ্ত তার সঙ্গে কথা বল্লেন এবং সে কি বলচে আমাদের বুঝিয়ে দিলেন । নাম তার মসি, কি তার হাসি, কি তার মুখের স্বন্দর ভঙ্গি । তাকে না দেখলে এই গভীর অরণ্য-প্রদেশ যেন জীবন্ত হয়ে উঠতে না। প্রাচীন দিনের মৌন অরণ্য যেন মুখর হয়ে উঠলো ওর মুখের ভাষায়। ভাল লেগেচে সেই বন্য যুবকের আনন্দ-চঞ্চল গতি, হাসিমাখা মুখ, সরল চোখের চাহনি । নিকটেই কুন্তী বলে একটা গ্রাম আছে বোনাই স্টেটের । পথে টেতী নায়েক বল্লে—গায়ের লোককে বাঘে মেরেচে, পাচ বছর আগে সে নাকি দেখেচে । এক বৃদ্ধ লোককে আমরা মোটরে উঠিয়ে নিলাম, তার নাম শামে, তার ভাইয়ের নাম কামো। উড়িয়া ভাষায় কথা বল্পে । তারপর রাত্রে ও-বেলার সেই কোইন নদীর সুন্দর জায়গাটাতে এসেচি । ঘন বনের মধ্যে চাদ উঠেচে, আমরা মোটরে এসে পৌছলাম। শামো (কামোর ভাই—সে নিজের পরিচয় দিতে গেলে সৰ্ব্বদাই ভাইয়ের উল্লেখ করে । ) এবং কয়েকটি লোক এই বনের মধ্যে আগুন করে বসে আছে । আমাদের জন্তে তাদের এখানে থাকতে বলা হয়েছিল । জ্যোৎস্না-প্লাবিত বনভূমি। রাত্রি দেড়টা। বিশাল সারেও অরণ্যের মধ্যে পাৰ্ব্বত্য কোইন নদীর কলতানের মধ্যে বসে আছি, কৃষ্ণাদ্বিতীয়ার চাদ মাথার ওপর এসেচে। মহামৌন অরণ্যানী যেন এই জল-কলতানের মধ্যে দিয়ে কথা বলচে। সে কি অদ্ভুত, রহস্যময় সৌন্দৰ্য্য— এর বর্ণনায় কি ভাষা আছে ? যে কখনো এমন হাজার বর্গমাইল নিবিড় অরণ্যানীর মধ্যে বভ নদীর পাষাণ-তটে জ্যোৎস্নালোকিত গভীর নিশীথে না বলে থেকেচে, তাকে এ গভীর সৌন্দৰ্য্য ৰোঝাবার উপায় নেই। এই বস্তহস্তী-ব্যাঘ্র-আধুষিত অরণ্যের মধ্যে এই কোইন নদী হাজার হাজার বছর এমনি বয়ে চলেচে, হাজার হাজার বছর ধরে প্রতি পূর্ণিমায়, প্রতি শুক্লপক্ষে, চাদ এমনি উঠে বনভূমি পরিপ্লাবিত করেচে, এই কোইন নদীর এই স্বন্দর স্থানটিতে আলো-ছায়ার জাল বুনেচে, এমনি সৌন্দর্যের স্বষ্টি করেচে–কিন্তু কেউ দেখতে আসেনি এর