পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হে অরণ্য কথা কও § gê রাঙা হয়ে এসেচে গুয়া পাহাড়ের মাথায়। আমরা ওদিকে দিয়ে ঘুরে আবার এদিকে এসে পড়েচি । এই পাহাড়ের ওপারে গুয়া, steep রাস্ত দিয়ে উঠে বনের মধ্যের পথে সাডে ছ' মাইল মাত্র, কিন্তু মোটরের রোড দিয়ে বাইশ মাইল । o আমি বললুম—তবে শশাংদাৰুরু এখান থেকে কেন দেখা যাবে না ? তিন হাজার ফুট উচু পাহাড়—সেদিন শশাংদাবুরুর মাথা থেকে আমরা ছোটনাগরা দেখেছিলুম—এখান থেকে কেন শশাংক্ষাবুরু দেখা যাবে না ? গুয়ার সমশ্রেণীতে যে পাহাড টানা চলে গিয়েচে—তারই এক জায়গায় শশাংদাবুরু, খুব উচু —আমরা ঠিক করলুম। সন্ধ্যায় একটি ঝর্ণার ধারে নিবিড় অন্ধকার বনে, গ্রাম থেকে কিছুদূরে বসি। সারেণ্ডার সব স্থানই ভাল, কত সহস্ৰ beauty spot যে এর মধ্যে ইতস্তত: ছড়ানে—ত কে বলবে ? অামার আবার সব জায়গাই ভাল বলে মনে হয়, সুতরাং চারিদিকেই beauty spot-এর ভিড়ে দিশাহীরা হয়ে আছি । নক্ষত্র উঠেচে অন্ধকার আকাশে বনস্পতি শীর্ষে । চলে এলুম তাড়াতাডি, কি জানি হাতীটাতী আসতে পারে। বড় শীত । আগুনের পাশে বসে সারদানন্দের “রামকৃষ্ণদেবের জীবনী’ পড়ি । আজ সকালে উঠেচি খুব ভোরে । সূৰ্য্য তখনও ওঠেনি। বেশ শীত। চা খেয়ে বসে লিখচি। তার পরে মালাইয়ের পথে পাচ মাইল গিয়ে বঁাদিকে জঙ্গলের গায়ে হেন্দেসিরি পাঠকজির saw-mil দেখতে গেলুম। কাছেই একটি ঝর্ণা বয়ে যাচ্চে, নির্জন বনে ঘেরা beauty spot, তার মধ্যে ছোট কারখানাটি । একটা পাহাড়ের ওপরে মালিকের জন্যে এক ছোট্ট বাংলো করে রেখেচে, মাটির মেজে গোবর দিয়ে রেখেচে । এখানে বসে লেখা-পড়ার কাজ বেশ চলে ! বেলা একটার সময় ফিরে তেনতারি ঘাটে গিয়ে কোইনা নদীতে পার হওয়া যায় কিনা দেখে এলুম। কোইন নদীর সঙ্গে বার বার দেখা হচ্চে, প্রত্যেক বাংলোতে থাকতে। কেবল দেখা হয়নি তিরিলপোসি থাকতে। অপূৰ্ব্ব শোভা এই বন্ত নদীর, তেতারি ঘাটেও তাই, বড় বড় পাথর বাধানো তটভূমি বনস্পতিশ্রেণীর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেচে। এক জায়গায় চপ করে বসে রইলাম । Range Officer বল্পে, ছোটানাগরা’ নামের অর্থ এখানে একটা লোহার নাগরা বা ঢোল আছে বনের মধ্যে পড়ে, প্রাচীন দিনে মানুষের চামড়া দিয়ে ঢাকা হোত এবং বাজানো হোত । পথে আসতে মোটরের প্রিং ভেঙে গেল, বেলা তখন দু’টো এসে জানাহার করে কিছু বিশ্রাম করলুম। "দেবযান’ লিখি । তারপর বেলা পড়লে--পশ্চিম দিকের পাহাড়ের আড়ালে সূৰ্য্যদেব অস্ত গেলেন, চারিধারে পাহাড়ে-ঘেরা জায়গাটার কি চমৎকার শোভা হোল। আমরা একটু বেড়িয়ে এল্ম পথ দিয়ে। একটা ৰাসঙ্গালা পাহাড়ে উঠতে গিয়ে কাপড়ে ঘাসের বিচি লেগে গেল।