পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 বিভূতি-রচনাবলী বাংলোর পেছনে ছোট টিলাটার পাথরের ওপরে বসলুম সন্ধ্যায়। আকাশে নক্ষত্র উঠেচে, বনের মাথায়, পূবদিকে একটা গাছের আড়ালে পড়েচে সেই জলজলে নক্ষত্রট, ফুলডুংরি থেকে সেদিন রাত্রে মেটা দেখেছিলুম। পশ্চিম আকাশে বনের পাথরে পাহাড়ের মাথায় অস্ত দিগন্তের রাঙা আভা । অসীম নক্ষত্রময় ব্রহ্মাও, অনন্ত স্বষ্টি । একমনে বসে যোগাসনে সেই বিশ্বস্রষ্টার কথা ধারা চিন্তা করেন, এইসব সন্ধ্যায়, এই সব বনানীর শাস্ত পবিত্রতায়—র্তারা সাধু, যোগী। তাদের কথা জানি না, তবে চারিদিকে চেয়ে এই সন্ধ্যায় মন ভরে উঠলো বটে। বিশ্বদেবের উদ্দেশে আপনিই মাথা নত হয়ে আসে। দূরের ক্ষুদ্র বারাকপুর গ্রামে এখন নদীতীরে ছায়া পড়েচে, দূরে মাঠে পড়েচে, লিচুতলা ক্লাবে মন্মথদা ও যতীনদ বসে গল্প জুড়েচে–কল্যাণী ঘাটশিলায় সন্ধ্যাদীপ দেখাচ্চে, কতদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি । জীবনের কত অদ্ভূত রহস্য—অদ্ভুত পরিবর্তন ! এমন স্থানে এমন সময়ে জীবনটাকে ভেবে দেখবার অবকাশ পায় ক’জন ? কৰ্ম্মকোলাহলমুখর শহুরে মানুষ নিজেকে বুঝতে জানতে পায় না। এই নিস্তব্ধ গভীর বনপ্রান্ত, ঐ শৈলমাল, অগণ্য নক্ষত্রদল মাথার ওপরে, সন্ধ্যার মায়া—আলো-মাখানো দিগন্ত, বনশীৰ্ষ শৈলচুড়, ঝিঝির ডাক—সবই মনকে অন্তমুখী হতে সাহায্য করে । আজ শীত কম। অনেকক্ষণ বসে রইলুম পাহাড়টাতে। তারপর অন্ধকার ঘনীভূত হোল । মিঃ সিন্‌হা বাংলোর টেবিলে বসে লিখচেন দেখতে পাচ্ছি, হাতীর বা বাঘের ভয়ট তত নেই এখানে | উনি ডাকলেন—দাদা— আমি বল্লাম যাই— আজ সকালে উঠে আমরা মোটরে সলাই বাংলোতে এলুম। পথে ছোটানাগরা গ্রাম ছাড়িয়ে একটা লত-ঝোপের মধ্যে দুটি লোহার ঢোল পড়ে আছে। একটা ছোট, এক ফুট ব্যাসবিশিষ্ট, অদ্যটি আড়াই ফুট ব্যাসবিশিষ্ট । এই জঙ্গলে এক রাজা ছিল—তার নাম অভিরাম টুং । তার আমলে এখানে বাড়ী ছিল । ছোট ঢোলটা মানুষের চামড়া দিয়ে ছাওয়া হোত ও বাজানো হোত । সলাই বাংলোটি বড় চমৎকার স্থানে অবস্থিত। বামে, সন্মুখে, অতি নিকটেই ঘন বনাবৃত পৰ্ব্বতমালা দু'হাজার ফুট উচু। পৰ্ব্বতের পটভূমিতে সামনেই খুব বড় মোটা প্রায় দশ ফুট ব্যাস যুক্ত গুড়িওয়ালা এক শিমুলগাছ। তার পেছনে অসংখ্য বনপাপ, নটরাজের মত তাণ্ডব নৃত্যের ভঙ্গীতে শাখাবাহু ছড়িয়ে কি একটা গাছ বনের মধ্যে দাড়িয়ে শোভা আরও বাড়িয়ে দিয়েচে। প্রভাতের শিশিরসিক্ত নিস্তন্ধ বনস্থলীতে কত্তপ্রকার বনবিহঙ্গের অদ্ভূত কুজন। বান্ধান্দায় চেয়ার পেতে শুনচি একটা পাখী টুং টুং টুং টুং করে ডাকচে, আর একটা পোক৷ টিয়ার মত যেন বুলি বলচে, চোখ বুজে কান পেতে শুনচি ও পক্ষীকূলের কলতান। বাম