পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ßßsto বিভূতি-রচনাবলী যুগে এত লোহা পৃথিবীর উষ্ণ গলিত ধাতুস্রাব থেকে তৈরী হয়েছিল কিংবা ফুটন্ত গর্ভকেন্দ্র থেকে ঠেলে উঠেছিল—কে বলবে! মাথা ঘুরে যায় এই বিরাট বস্তুপুঞ্জ এক জায়গায় পৰ্ব্বতাকারে জমাট বাধা অবস্থায় দেখলে। কি সে মহাশক্তি, কোন সে মহাদেবতা—এই সব বস্তুপিণ্ড যিনি লীলাচ্ছলে সাজিয়ে গিয়েচেন, কোন প্রচণ্ড শক্তির বলে এই বিশাল লৌহপৰ্ব্বত পৃথিবীগর্ত থেকে উখিত হয়েচে, এসব ভূতত্ত্ববিদের বলবেন, আমরা শুধু বিশ্বয়ে স্তন্ধ হয়ে চেয়েই আছি । আমরা চলেচি আসলে আংকুয়া ২৯’ নামক বনবিভাগের চিহ্নিত অংশে, একটি নাকি জলপ্রপাত আছে, তাই দেখতে । খনির খাদ হচ্ছে পাহাড়ের ওপারে, আমাদের সামনে আবার প্রায় ৪০০৫ • • ফুট উচু খাড়া রেলপথে Skip উঠেচে আরও উচ্চতর পক্ষত শিখরাঞ্চলে। রাঙা লৌহপ্রস্তরের ধুলিমাখা হো কুলি মেয়ের হাসিমুখে কাজ করচে। এদের মধ্যে অনেকে দেখতে বেশ সুন্দর । মাইল দেড় খনির করা workings-এর মধ্য দিয়ে হাটবার পরে আমরা জঙ্গলে প্রবেশ করলুম—এসব রিজার্ভ ফরেস্ট। ধনেশপার্থী ডাকচে বনে। সেই যে একপ্রকার কাটাওয়াল ফল, ওকড়। ফলের মত, যা কাপড়ে লেগে সেদিন টোয়েৰু যাবার পথে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, তা এখানেও লাগতে লাগলো। অতি দুর্গম পথ—একটি নালা ধরে নালার খাতের পাষাণ বাধানে—একদম লৌহপ্রস্তর বাধানে—গর্ভ দিয়ে বড় ছোট পাথর ডিঙিয়ে নামচি, নামচি, নামচি । ফরেস্ট গার্ডকে বলচি আমরা, ও Falls কেতনা দূর ? সে প্রথমে বল্পে—এক মাইল। এখন বলচে দেড় মাইল । তারপর পথ যতই দুর্গম হয়ে আসে, ও ততই বলে, দু ফাৰ্লং। কিন্তু একেবারে বিরাট wilderness-এর মধ্যে দিয়ে ক্রমনিম্ন পাহাড়ী ঝর্ণার পাষাণময় গতিপথ বেয়ে নামচি, নামচি–আশেপাশে চেয়ে দেখচি তৃণ, পানজন, বট, আসান, শিববৃক্ষ ( sterculia urens ), পান, আরও কত মোটা মোটা লতা, কম্প্রিটাম লতা, বন্যকন্দ, বন্য অশ্বগন্ধা—কত কি গাছপালা। এক জায়গায় বড় বড় পাথর বেরিয়ে আছে পাহাড়ের গায়ে, ঝর্ণার জল পড়ে একটা গর্ভ মত স্বষ্টি করেচে পাথরের ওপর। ছোট্ট একটি গুহাও । ফরেস্ট গার্ড একটা জায়গায় এসে বল্পে—আওর তিন ফাৰ্লং। সেখানে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়েচে। নালাটা হঠাৎ চল্লিশ ফুট ওপর থেকে নীচে পড়ে একটা গভীর খাতের স্বষ্টি করেচে এবং গভীর থেকে গভীরতর খণ্ড, কেটে ক্রমনিম্ন খাড়া ঢালু পথে বহু, বহুদূরে নেমে গিয়েচে ঘন বনের মধ্যে দিয়ে—দূরে জলপতনধ্বনি শুনতে পেলুম বটে। অদ্ভুত, গষ্ঠীর এই স্থানের দৃপ্ত। বর্ণনা করা যায় না। আমরা দেখলুম আরও তিন ফার্লং গিয়ে আজ আর ফিরতে পারবে না। চিড়িয়া খনির Skip বন্ধ হয়ে যাবে। তখন দুর্গম চালুপৰে হেঁটে নিচে নামবে কে ? ফরেস্ট গার্ড বঙ্গে—জলপ্রপাত ওখান থেকে দেখা যাবে না। ঢালুপথে অনেকটা নামতে হৰে-তিল ফার্লং গিয়ে, তৰে দেখা যাবে।