পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী د ميا8 ঝাড়ের পাশের চেয়ারে বলে পথের পাঁচালী’ লিখতাম, মুহুরী গোষ্ঠবাৰু বলে হিসেৰ বোঝাতে, উত্তর বিহারের বস্তার জলে-ডোবা মকাইয়ের ক্ষেত আর কাশবন—সেই উদাম ঘোড়ায় চড়া,সেই বটেশ্বরনাথ পাহাড়ের নীল দৃগু, সেই দিগন্তলীন মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্ট—সেই সব দূর অতীতের ছবি আজকার দিনে মনে জাগে । সে হোল আজ আঠারো বছর আগের কথা, মাকুবের ক্ষুদ্র জীবনে আঠারো বছর-—কত কাল ! কিন্তু এ দিনে আর একটি অদ্ভুত স্মৃতি জড়ানো আছে জীবনে । ১২ই ভাত্র সেবার ছিল জন্মাষ্টমী, মনে পড়ে ? মনে পড়ে সেই আকুল আগ্রহে সন্ধ্যা পর্য্যস্ত অপেক্ষা, সেই মাটির প্রদীপ হাতে একটি কিশোরীর ছবি খড়ের দাওয়ায় ? নাথ—এসব কথা মনের গভীর গহনে স্বগোপনেই থাকুক, এখানে লিখবো না কিছু । ද শুধু সেই অপূৰ্ব্ব দিনটির স্মৃতির উদেখে আজকার এই ক'টি কথা লিখে রাখলাম। পুরীতে যে মেয়েটি এই খাতাখানি আমার দিয়েছিল আজ ঘন সারেও অরণ্যের মধ্যে বসে ভার সে খাতাটিতে লিখচি । আজ ২৯শে ডিসেম্বর, ১৯৪৬ সাল । বেশ শীত, থলকোবাদ বনবিভাগের বাংলোতে বসে আছি, আগুন জলছে ঘরে । আজ সকালে মোটরে মিঃ সিন্‌হার সঙ্গে মুরাগীও গিয়েছিলাম। পথে পড়লো জাটিসিরিং বলে একটা অপূৰ্ব্ব স্বন্দর জায়গা, কোইন নদীর গর্তে । তিন বৎসর আগে জ্যোৎস্নারাত্রে এখানে এসেছিলুম, এমনি শীতের দিনে, রাত ১০টার পরে। এখানে বসে কিছু লিখেছিলুম মনে আছে। চারিদিকে ঘন অরণ্যভূমি, সামনে কেউনঝর স্টেটের পাহাড় ও বন, পেছনে বোনাইগড়ের বন, প্রায় ২০• • বর্গ মাইল ব্যাপী বন অরণ্য ধিরে রেখেচে আমাদের । বড়দিনের ছুটিতে এখানে বেড়াতে এসেছি । মনোহরপুরের পাহাড়ের ওপর যে সুন্দর বাংলোটি আছে বনবিভাগের, সেখানে ছিলাম দুদিন । তারপর এলুম এখানে। নির্জন বনপথে সেবার যেখানে বনমুরগী দেখেছিলাম, এবারও সেখানে সন্ধ্যার আগে বনমুরগী দেখা গেল। বাড়ীর পাশে চরে বেড়াচ্ছিল, মোটরের শব্দ শুনে উড়ে গেল। খলকোবাদ আসবার কিছু আগে বন্য ময়ূর দেখলাম, রাস্তার এ পারের বন থেকে ওপারের বনে ঢুকলো। আবার সেই খলকোবাদ বাংলো ! সেই অরণ্যের স্বগন্ধ, সেই নির্জনতা । - কাল বাবুডেরা ও বলিবা থেকে ফিরবার পথে এই নির্জনতা আমার বুকে এত বেশি যেন একটা গুরুভারের মত চেপে ধরছিল। শুধুই গাছ আর বন, আর লতা আর পাথর, জার পাহাড় । লোক নেই, জন নেই, লোকালয় নেই। আমি এখানে কতদিন একা থাকতে পারি? যদি ধরে বাবুডেরার পথে সেই পাহাড়টার ওপরকার তৃণভূমিতে, যেখানে মাছর পেতে বলে আমি আর সিন্ধা ঘণ্টা গল্প করলুম ও লিখলুম—সেখানে আমাকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় কিছু দিন থাকতে হয়, একটিও মাহুষের মুখ না দেখে, একজনের সঙ্গেও একটি কথা না বলে শুধু অন্ধকার বা আধ-জ্যোৎস্না রাত্রে মাথার ওপরকার আকাশে দেখবো পরিচিত কালপুরুষ ৰ সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল, তাদের চারিপাশে ছড়িয়ে আছে অগণ্য তারা, জার