পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ৰা হেডমাস্টারের নেকনজরে যে ব্যক্তি নাই, তাহার সহিত ঘনিষ্ঠতা করিতে যাওয়ার বিপদ আছে । নতুন টীচার চোখে চশমা লাগাইয়া ছড়ি ঘুরাইতে ঘুরাইতে নব্য কবির স্টাইলে আকাশপানে মুখ করিয়া যেই গেটের বাহিরে পা দিয়াছেন, অমনি যদুবাবু এদিক-ওদিক চাহিয়া বলিলেন, এই যে শুনছেন, রামেন্দুবাবু—এই যে— রামেন্দুবাৰু হঠাৎ যেন চমকিয়া উঠিয়া পিছনে ফিরিয়া বিস্ময়ের সঙ্গে বলিলেন, আমাকে বলছেন ? যেন তিনি ইহা প্রত্যাশা করেম নাই, উfহার্কে কেহ ডাকিবে। যদুবাৰু বলিলেন, আমরাই ডাকছি, জাহন, একটু চ খেয়ে আসি। —ও । আচ্ছ—ত। চলুন। সকলেই খুৰ আওহাম্বিত। নতুন টীচারের সঙ্গে এড় দিন আলাপ ভাল করিয়া হয়ই নাই, অনেকের সঙ্গে একটা কথাও হয় নাই। আজ ভাল করিয়া আলাপ করা যাইবে। লোকটার অন্তকার কাৰ্য্যে তাহার সম্বন্ধে মাস্টারদের কৌতুহলের অন্ত নাই। আলমকে যে অপমাম করিয়া ছাড়িয়াছে, সে সকলের বন্ধু। চায়ের দোকানে গিয়া প্রতিদিনের মত মজলিস জমিল। স্কুল-মাস্টারদের অবশ্ব যতটা হওয়া সম্ভব, তাহার বেশী ইহাঙ্গের ক্ষমতা নাই। নতুন টীচারকে খাতির করিয়া দুইখানা টোস্ট দেওয়া হইল, বাকী সবাই একখানা করিয়া টেস্ট লইলেন। পরস্পর একটা মানসিক বোঝাপড়া হইল যে, নতুন টীচারের খাবারের বিলটা সকলে মিলিয়া চাদ করিয়া দিবেন। নারাণবাবু আলাপের ভূমিকাস্বরূপ প্রথমে জিজ্ঞাসা করিলেন, মশায়ের বাড়ী কোথায় ? —আমার লাড়ী ছিল গিয়ে নদে জেলায় স্ববর্ণপুর। এখন কলকাতায় আছি অনেক দিন । —কলকাতায় কোথায় থাকেন ? —মেসে । —s মছবাবু একটু ঘনিষ্ঠত করার জন্য বলিলেন, অনেক দিন কলকাতায় আর কী আছ, ভায়া, তোমার বয়েসটা কা আর এমন ? অামাদের চেয়ে কত ছোট— নতুন টীচার এ ঘনিষ্ঠতায় বিশেষ ধরা দিলেন না। খুব ভয়তার সঙ্গে বিনীতভাবে জানাইলেন, তাহার বয়স খুব কম নয়, প্রায় চৌত্রিশ পার হইতে চলিল। ‘দাদা" কথাটার ব্যবহার একবারও করিলেন না। বেশ একটু ভদ্র ও বিনীত ব্যবধান বজায় রাখিয়া চলিলেন কথাবাৰ্ত্তায় ও চালচলনে । একথ-ওকথার পর স্বন্ধুবাবু হঠাৎ বলিলেন, আজ আমরা খুব খুশী হয়েছি, বেশ শিক্ষা দিয়েছেন (মাখামাধি করিবার সাহস তাহার উৰিয়া গিয়াছিল) ওই ব্যাটাকে— নতুন টাচার ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া বলিলেন, কার কথা বলছেন ?