পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারাণবাবু রোজ বিকালে টুইশানিতে যাইবার আগে দুইটি কমলালেবু, কোনদিন বা এক গুচ্ছ আঙর লইয়া নিভাননীকে দেখিয়া যান। স্কুলে পরদিন বলেন, ও ক্ষেত্র-ভায়া, বউমা কাল বলছিলেন, তুমি হাত পুড়িয়ে রোধে খাচ্ছ, তোমার কে এক শালী আছেন, তাকে এনে ছুদিন রাখ না— —আপনাকে বললে বুঝি ? —ইn, কাল উনি বলছিলেন। তোমার কষ্ট হচ্ছে। কবে যে সেরে উঠব, কবে যে বাড়ী যাব-বলছিলেন বউমা । —ওই রকম বলে। শালীকে আন কী সহজ দাদা ? নিয়ে এস খরচ করে, দিয়ে এস খরচ করে—খাওয়াও লুচি-পরোট। সে কি আমাদের সাধি । নারাণবাবুকে নিভাননী ‘দাদা’ বলিয়া ডাকে। আড়ালে ‘বটুঠাকুর’ বলিয়া ডাকে স্বামীর কাছে। নারাণবাৰু কত রকম মজার গল্প করেন তাহার কাছে, রোগীর মনে আনন্ম দিতে চান! একদিন নিভাননী বলিল, দাদা, আমি ভাল হলে আপনাকে ছোট বোনের বাড়ী একদিন খেতে হবে । নারাণবাবু শশব্যস্ত হইয়া বলেন, নিশ্চয় বউমা, নিশ্চয়, এর আর কথা কী ? —আপনি কী খেতে ভালবাসেন দাদা ? —আমি ? অামার—বউমা—বুড়ো হয়েছি—যা হয় সব ভাল লাগে। একলা থাকি, রোধে খাই— —কতদিন আছেন একা ? —তা আজ সাতাশ বছর বউমা । —একা আছেন ? —ত থাকতে হয় বইকি বউমা । নিজেই রাধি—এই বয়সে কি রান্না করতে ইচ্ছে করে ? বেশী কিছু রাধি না, যা হয় একটা তরকারি করি। —আপনি মাছ খান ? —ত খাই বউমা ও বেষ্টিমদের ঢঙ নেই আমার । পুরুষ মহিষ, মাছ-মাংস কেন খাব না ? ও বেষ্টিমদের মেয়েলিপনার ঢঙ দেখলে আমি হাড়ে চটি। —আমি আপনাকে ইলিশমাছের দুই-মাছ রোধে খাওয়fব । আমি দিদিমার কাছে রাধতে শিখেছি, জানেন ? পিতৃসম স্নেহময় বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলিবার সময়ু নিভাননীর কণ্ঠে আপনিই যেন আবদারের স্বর আসিয়া পড়ে। তাহার বালিকা-বয়সে যে বাবা স্বর্গে গিয়াছেন, যাহার কথা ভাল মনে পড়ে না—এই প্রাণখোলা সরল বৃদ্ধের মধ্যে নিভাননী তাহাকেই যেন আবার দেখিতে পায়, নিজের কণ্ঠে কখন যে কন্যার মত আবদার-অভিমানের স্বর আসিয়া পড়ে সে বুঝিতেও পারে না। - নারাশবাৰু বসিয়া স্থখ-দুঃখের কথা বলেন। নারীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আজ ত্রিশ বছর