পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী যদি একটা শক্ত অম্বখবিশ্বখ হয় কাহারও—কে দেখাশোনা করিবে তাহাদের ? এ সব ভাবিয়া দেখিবার জিনিস । স্কুলের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হইয়। আসিতেছে। গ্রীষ্মের ছুটির পর দুই মাস চলিয়া গিয়াছে, অথচ ছুটির মাহিনী এখনও সম্পূর্ণ শোধ হয় নাই। সাহেবকে বার বার বলিয়াও কোন ফল হয় না। সাহেবের এক কথা, এ বছর কষ্ট সহ করিতে হইবেই। যাহার না পোষায়, সে চলিয়া যাইতে পারে। একদিন সাহেবের সারকুলার-অস্থায়ী ছুটির পর সাহেবের আপিলে শিক্ষকদের হাজির হইতে হইল। সাহেব বলিলেন, আজ একটা বিশেষ জরুরী মীটিং করা দরকার । থার্ড ক্লাসে গণিতের ফল আদৌ ভাল হইতেছে না, এ বিষয়ে শিক্ষকদের লইয়া পরামর্শ করা নিতান্ত আবগুক । - মীটিং চলিল। হতভাগ্য টীচারের দল থালিপেটে প্রাস্তদেহে পাচটা পৰ্য্যস্ত নানারূপ কৌশল উদ্ভাবন করিতে ব্যস্ত রহিল—থার্ড ক্লাসে কী করিয়া অ্যালজেব্রা ভালরূপে শিখানে যায়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কোন বৈদেশিক শক্তি যুদ্ধ ঘোষণা করিলে ইংলণ্ডের প্রধান মন্ত্রী এতদপেক্ষা অধিক আগ্রহ ও উদ্যোগ দেখাইতে পারিতেন না তাহার ক্যাবিনেট নীটিংয়ে ! পাঁচটা বাজিয়া গেল। তখনও প্রস্তাবের অন্ত নাই। থার্ড ক্লাসের গণিত শিক্ষার ভারপ্রাপ্ত টীচার হতভাগ্য শেখরবাবু মানমুখে বসিয়া শুনিয়া যাইতেছেন, কারণ এ অবস্থার জন্য তিনিই ধৰ্ম্মত দায়ী। তাহার দপ্তরেই এ দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। উক্ত ক্লাসের গত দুইটি সাপ্তাহিক পরীক্ষায় গণিতের ফল আদৌ আশাপ্রদ হয় নাই। সাড়ে পাচটার সময় হেডমাস্টার উঠিয়া ধীরে ধীরে গণিতশিক্ষার প্রকৃষ্ট উপায় সম্বন্ধে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ পাঠ শুরু করিলেন—খাতার বহর দেখিয়া মনে হইল, সাড়ে ছয়টার কমে সে প্রবন্ধ শেষ হইবে না। • . হঠাৎ নতুন টীচার দাড়াইয়া বলিলেন, স্তার, আমার একটা কথা বলবার আছে। হেডমাস্টার প্রবন্ধ পাঠ করিতেছিলেন, থামিয়া মুখ তুলিয়া বিম্মিতভাবে নতুন টাচারের দিকে চাহিয়া ক্র কুঞ্চিত করিয়া বলিলেন, ইয়েস ? —স্তার, ছটা বাজে, মাস্টারে সকলেই ক্ষুধাৰ্ত্ত। আজ এই পৰ্য্যন্ত থাকলে ভাল হয়। নতুন টাচারের সাহস দেখিয়া সবাই বিক্ষিত ও শুদ্ভিত। হেডমাস্টার বলিলেন, জান মাস্টার, আমি আমার বক্তব্যের মধ্যে কোন বাধাস্বটি পছন্ম করি না ? —স্তার, আমায় ক্ষমা করবেন। স্পষ্ট কথা বলবার সময় এসেছে। আপনার এ রকম মৗংি মাস্টারদের পক্ষে বড় কষ্টদায়ক হয়। এতে স্কুলের কাজ হয় না। —ছুক্সের কাজ কি তোমার কাছে আমায় শিখতে হৰে ।