SR মাস-দেড়েক পরে, পাঁচ দিন জম্বর-ভোগের পর আজ সকাল হইতে নীলাম্বরের জর ছিল না । বিরাজ বাসি কাপড় ছাড়াইয়া, স্বহস্তে কাচা কাপড় পরাইয়া দিয়া, মেঝোয় বিছানা পাতিয়া শোয়াইয়া দিয়া গিয়াছিল। নীলাম্বর জানালার বাহিরে একটা নারিকেল বৃক্ষের পানে চাহিয়া চুপ করিয়া পড়িয়াছিল। ছোট বোন হরিমতি কাছে বসিয়া ধীরে ধীরে পাখার বাতাস করিতেছিল। অনতিকাল পরেই স্নান করিয়া বিরাজ সিক্ত চুল পিঠের উপর ছড়াইয়া দিয়া পট্টবস্ত্র পরিয়া ঘরে ঢুকিল। সমস্ত ঘর যেন আলো হইয়া উঠিল। নীলাম্বর চাহিয়া দেখিয়া বলিল, ও কি ? বিরাজ বলিল, যাই, বাবা পঞ্চানন্দের পূজো পাঠিয়ে দিই গে, বলিয়া শিয়ায়ের কাছে হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া হাত দিয়া স্বামীর কপালের উত্তাপ অনুভব করিয়া বলিল, না, জ্বর নেই। জানি নে এ বছর মার মনে কি আছে। ঘরে ঘরে কি কাণ্ড যে সুরু হয়েছে-আজ সকালে শুনলাম আমাদের মতি মোড়লের ছেলের সর্বাঙ্গে মারি অনুগ্রহ হয়েছে।--দেহে তিল রাখবার স্থান নেই! নীলাম্বর ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, মতির কোন ছেলের বসন্ত দেখা দিয়েছে ? বড়ছেলের। মা শীতলা, গা ঠাণ্ড কর মা -আহাঁ, ঐ ছেলেই ওর রোজগারী। গেল শনিবারে শেষ রাত্তিরে ঘুম ভেঙ্গে হঠাৎ তোমার গায়ে” হাত পড়ায় দেখি, গা যেন পুড়ে যাচ্ছে। ভয়ে বুকের রক্ত কাঠ হয়ে গেল। উঠে ব’সে খানিকক্ষণ কঁাদলুম, তার পর মানস করলুম, মা শীতলা, ভাল যদি কর মা, তবেই ত তোমার পূজো দিয়ে আবার খাব দাব, না হ’লে
পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪
অবয়ব