পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিৱাজ-বেী Vo বলিল, অধীর হ’লে কি হবে বিরাজ ? একটা বছর যদি ষোল আনা ফসল পাই, বার আনা বিষয় উদ্ধার ক’রে নিতে পায়াব ; কিন্তু বিক্রি ক’রে ফেললে আর তা হবে না, সেটা ভেবে দেখ। বিরাজ আৰ্দ্ধস্বরে বলিল, দেখেচি। আসাচে বছরেই ষোল আনা ফসল পাবে, তারই বা ঠিকানা কি ? তার ওপর সুন্দ আছে, লোকের গঞ্জনা আছে। আমি সব সইতে পারি, কিন্তু তোমার অপমান ত সইতে পারি। নে ! নীলাম্বর নিজে তাহা বেশ জনিত, তাই কথা কহিতে পারিল না । বিরাজ পুনরায় কহিল, শুধু এই কি আমার সমস্ত দুঃখ ? দিবারাত্রি ভেবে ভেবে তুমি আমার চােখের সামনে শুকিয়ে উঠছে, এমন সোনার মূৰ্ত্তি কালি হয়ে যাচ্চে! আচ্ছা, আমার গা ছুয়ে তুমিই বল, এও সন্থ করবার ক্ষমতা কি আমার আছে ? আর কতদিন যোগীনের পড়ার খরচ যোগাতে হবে ? আরও একটা বছর। তা হ’লেই সে ডাক্তার হ’তে পারবে । * বিরাজ এক মুহূৰ্ত্ত স্থির থাকিয়া বলিল, পুটকে মানুষ ক’রেচি, সে আমার রাজরাণী হ’ক, কিন্তু সে হ’তে আমার এতটা দুঃখ ঘটবে জানলে, ছোট-বেলায় তাকে নদীতে ভাসিয়ে দিতুম। এমন ক’রে নিজের মাথায় বাজ হানতুম না ! হা ভগবান। বড়লোক তারা, কোন কষ্ট, কোন অভাব নেই, তবুও জোকের মত আমার বুকের রক্ত শুষে নিতে তাদের এতটুকুও দয়া মায়া হচ্চে না ! বলিয়া একটা সুগভীর নিশ্বাস ফেলিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিল। বহুক্ষণ নিঃশব্দে কাটিবার পরে বিরাজ মুখ তুলিয়া দুঃখীয়া ত এরই মধ্যে কেউ উপোষ, কেউ একবেল খেতে সুরু করেচে, এমন দুঃসময়েও আমরা পরের ছেলে মানুষ করব কেন ? গুটির শ্বশুরের অভাব নেই, সে বড়লোক ; সে যদি নিজের ছেলেকে না পড়াতে