বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e বিরাজ-বেী যে দশ টাকার নোট বাঁধা আছে, ফিরিয়ে দি গে, দিয়ে দুঃখী মানুষ দুঃখখান্দা করে খা গে। নিজে বয়সকালে যা করেছিল, সে ত আর ফিরবে না, কিন্তু আর পাঁচজনের সর্বনাশ করতে যাস নে। I সুন্দরী কি একটা বলিতে চাহিল, কিন্তু তাহার জিভ মুখের মধ্যে আড়ষ্ট হইয়া রহিল। বিরাজ তাহাও দেখিল । দেখিয়া বলিল, মিথ্যে কথা বলে আর কি হবে ? এ সব কথা আমি কাউকে বলব না। তোর আঁচলে বাধা নোট কোথা থেকে এল, সে কথা আমি আগে বুঝি নি, কিন্তু এখন সব বুঝতে পাচ্ছি! যা, আজ থেকে তোকে আমি জবাব দিলুম-কাল আর আমার বাড়ী ঢুকিসনে। এ কি কথা ! নিদারুণ বিস্ময়ে সুন্দরী বাকশূন্ত হইয়া বসিয়া রহিল। এ বাটীতে তাহার কাজ গেল, এমন অসম্ভব কথা সে মনের মধ্যে ঠিক মত গ্ৰহণ করিতেও পারিল না । সে অনেক দিনের দাসী । সে বিরাজের বিবাহ দিয়াছে, হরিমতিকে মানুষ করিয়াছে, গৃহিণীর সহিত তীৰ্থদৰ্শন করিয়া আসিয়াছে-সেও যে এ বাটীর একজন। আজ তাহাকেই, বিরাজ-বেী বাটীতে প্ৰবেশ করিতে নিষেধ করিল। ক্ষোভ এবং অভিমান তাহার কণ্ঠ পৰ্যন্ত ঠেলিয়া উঠিল--এক মুহুৰ্ত্তে কত রকমের জবাবদিহি, কত রকমের কথা তাহার জিহবাগ্ৰ পৰ্য্যন্ত ছুটিয়া আসিল, কিন্তু মুখ দিয়া শব্দ বাহির করিতে পারিল না-বিহািবলের মত চাহিয়া রহিল। বিরাজ মনে মনে সমস্ত বুঝিল, কিন্তু সেও কোন কথা কহিল না। মুখ ফিরাইয়া দেখিল, হাঁড়ির জল কমিয়া গিয়াছে। অদূরে একটা পিত্তলের কলসীতে জল ছিল, ঘটি লইয়া তাহার কাছে আসিল ; কিন্তু কি ভাবিয়া এক মুহুৰ্ত্ত স্থির থাকিয়া ঘটটা রাখিয়া দিল-না, তোর হাতের জল ছুলে ওঁর অকল্যাণ হবে-তুই ঐ হাত দিয়ে টাকা নিয়েছিল! সুন্দরী এ তিরস্কারের উত্তরও দিতে পারিল না ।