বিরাজ-বেী কোণে এমন কালি পড়িয়াছে। ভ্রর উপর, সুন্দর সুডৌল ললাটে দুশ্চিন্তার এত সুস্পষ্ট রেখা ফুটিয়াছে! একটা অবোধ্য, অব্যক্ত, অপরিসীম বেদনায় তাহার সমস্ত বুকের ভিতরটা যেন মুচড়াইয়া উঠিতে লাগিল এবং অসাবধানে এক ফোটা বড় অশ্র বিরাজের নিমীলিত চোখের পাতার উপর টপ করিয়া পড়িবামাত্রই সে চোখ চাহিয়া দেখিল। ক্ষণকাল নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল, তার পর দুই হাত প্রসারিত করিয়া স্বামীর বক্ষ বেষ্টন করিয়া ক্ৰোড়ের মধ্যে মুখ লুকাইয়া পাশ ফিরিয়া চুপ করিয়া শুইল।। নীলাম্বর সেই ভাবে বসিয়া থাকিয়া কঁদিতে লাগিল । বহুক্ষণ কাটিলকেহ কথা কহিল না । তারপর রাত্রি যখন আর বেশি বাকি নাই, পূৰ্বাকাশ স্বচ্ছ হইয়া আসিতেছে, তখন নীলাম্বর নিজেকে প্ৰকৃতিস্থ করিয়া লইয়া স্ত্রীর মাথার উপর হাত রাখিয়া সস্নেহে বলিল, হিমে থেক না বিরাজ, ঘরে চল । চল, বলিয়া বিরাজ উঠিয়া পড়িল এবং স্বামীর হাত ধরিয়া ঘরে আসিয়া শুইয়া পড়িল । সকল-বেলা নীলাম্বর বলিল, যা তোর মামার বাড়ী থেকে দিন-কতক ঘুরে আয় বিরাজ, আমিও একবার কলকাতায় যাই। কলকাতায় গিয়ে কি হবে ? নীলাম্বর কহিল, কত রকম উপার্জনের পথ সেখানে আছে, যা হোক একটা উপায় হবেই-কথা শোনা বিরাজ, মাস-খানেক সেখানে গিয়ে থাক গে। বিরাজ জিজ্ঞাসা করিল, কতদিনে আমাকে ফিরিয়ে আনবে ? নীলাম্বর বলিল, ছমাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনব, তোকে আমি কথা দিচ্ছি। আচ্ছা, বলিয়া বিরাজ সম্মত হইল। দিন চার-পাঁচ পরে গরুর গাড়ী আসিল, মামার বাড়ী হইতৃে আট
পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬১
অবয়ব