*}盘 I বিরাজ-বেী বিরাজের শেষ কথাটা-কি করিয়া সংসার চলিতেছে এবং কেবলি মনে পড়িতে লাগিল, সেদিনের সেই অন্ধকার গভীর রাত্রে ঘরের বাহিরে ভুশয্যায় সুপ্ত বিরাজের শ্ৰান্ত অবসন্ন মুখ। সত্যই ত! সত্যুই তা! দিন যে কেমন করিয়া চলিতেছে এবং কেমন করিয়া যে ওই অসহায়া রমণী একাকিনী চালাইতেছে, সে ত তাহার জানিতে বাকি নাই। অনতিপূর্বে বিরাজের শক্ত কথা তীরের মতই তাহার বুকে আসিয়া বিধিয়াছিল, কিন্তু যতই সে বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল, ততই তাহার হৃদয়ের সেই ক্ষত, সেই ক্ষোভ শুধু যে মিলাইয়া আসিতে লাগিল তাহা নহে, ধীরে ধীরে শ্রদ্ধায় বিস্ময়ে রূপান্তরিত হইয়া দেখা দিতে লাগিল । তাহার বিরাজ ত শুধু আজকের বিরাজ নয়, সে যে কতকাল, কত যুগযুগান্তরের। তাহার বিচার শুধু দুটাে দিনের ব্যবহারে দুটাে অসহিষ্ণু কথার উপর করা চলে না। সে হৃদয় কি দিয়া পরিপূর্ণ, সে কথা ত তার চেয়ে আর কেউ বেশি জানে না ! এইবার তাহার দুই চোখ বাহিয়া দর দর করিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িল। সে অকস্মাৎ দুই হাত জোড় করিয়া উৰ্দ্ধমুখে রুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিল, ভগবান, আমার যা আছে সব নাও, কিন্তু আমার একে নিও না । বলিতে বলিতেই একটা প্ৰচণ্ড ইচ্ছার বেগ সেই মুহুর্তেই তাহার প্রিয়তমাকে বুকের মধ্যে চাপিয়া ধরিবার জন্য তাহাকে যেন একেবারে ঠেলিয়া দিল। সে ছুটিয়া বিরাজের রুদ্ধ দ্বারের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল। দ্বার ভিতর হইতে বন্ধ, সে ঘা দিয়া আবেগ-কম্পিত্যকণ্ঠে ডাকিল, বিরাজ ! / বিরাজ মাটির উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া কঁাদিতেছিল, চমকাইয়া উঠিয়া বসিল । নীলাম্বর বলিল, কি কচ্চিস বিরাজ, দোর খোল। বিরাজ সভয়ে নিঃশব্দে দ্বারের কাছে আসিয়া দাড়াইল । নীলাম্বর ব্যস্ত হইয়া বলিল, খুলে দে বিরাজ ! R
পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৭
অবয়ব