ঠিক কাহার অনুগ্রহে ঘটিয়াছিল বলিতে পারি না, কিন্তু কথাটা বিকৃত হইয়া বিরাজের কানে উঠতে বাকি থাকিল না। সেদিন আলোচনা করিতে আসিয়াছিলেন, ও-বাড়ীর পিসিমা । বিরাজ সমস্ত মন দিয়া শুনিয়া গম্ভীর হইয়া বলিল, ওঁর একটা কান কেটে নেওয়া উচিত পিসিমা ! পিসিমা রাগ করিয়া চলিয়া গেলেন । বলিতে বলিতে গেলেন, জানি ত ওকে-এমন ফাজিল মেয়ে গায়ে আর দুটি আছে কি ? ? বিরাজ স্বামীকে ডাকিয়া বলিল, কবে। আবার তুমি সুন্দরীর ওখানে গেলে ? নীলাম্বর ভয়ে শুষ্ক হইয়া গিয়া জবাব দিল, অনেকদিন আগে পুটির খবরটা নিতে গিয়েছিলাম । আর ষেও না। তাঁর স্বভাব-চরিত্র শুনতে পাই ভারী মন্দ হয়েচে, বলিয়া সে নিজের কাজে চলিয়া গেল । তারপর কত দিন কাটিয়া গেল । সূৰ্য্যদেব ওঠেন এবং অন্ত যান, তঁহাকে ধরিয়া রাখিবার যো নাই বলিয়াই বোধ করি, শীত গেল, গ্ৰীষ্মও যাই যাই করিতে লাগিল। বিরাজের মুখের উপর একটা গাঢ় ছায়া ক্রমশঃ গাঢ়তর হইয়া পড়িতে লাগিল, অথচ চোখের দৃষ্টি ক্লান্ত এবং খরতর। যে কেহ তাহার দিকে চাহিতে যায়, তাহারই চোখ যেন আপনি যুকিয়া পড়ে। শূল-বিন্ধ দীর্ঘ বিষধর শূলটাকে নিরন্তর দংশন করিয়া, শ্ৰান্ত হইয়া এলাইয়া পড়িয়া যে ভাবে চাহিয়া থাকে, বিরাজের চোখের দৃষ্টি তেমনই করুণ, অথচ তেমনই ভীষণ হইয়া উঠিয়াছে। স্বামীর সহিত কথাবার্তা প্রায়ই হয় না। তিনি কখন
পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮০
অবয়ব