পাতা:বিরাজ বৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজবোঁ (S তুলসী বলিল, বোমাকে ত ডাকচি। বাবা। কাল এক প্রহর রেতে কোথাও কিছর নেই, এই অাঁধারে মা গিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে মোট চাল চেয়ে আনলে, তাই সকালে দোর খোলা পেয়ে জানতে এলাম, সে চেলে কি কাজ হ’ল ? নীলাবর মনে মনে সমস্ত বঝিল, কিন্তু কোন কথা কহিল না। তুলসী বলিল, এত ভোরে তবে খিড়কি খািললে কে ? তবে বঝি বৌমা ঘাটে গেছেন, বিলিয়া চলিয়া গেল । নদীর ধারে ধারে প্রতি গতা, প্রতি বাঁক, প্রতি ঝোপ-ঝাড় অন্যাসন্ধান করিতে করিতে সমস্তদিন অভুক্ত অস্নাত নীলাম্বর সহসা একস্থানে থামিয়া পড়িয়া বলিল, এ কি পাগলামি আমার মাথায় চাপিয়াছে ! আমি যে সারাদিন খাই নাই, এখনও কি একথা তাহার মনে পড়িতে বাকী আছে ? এর পরেও সে কি কোথাও কোন কারণে একমাহত থাকিতে পারে ? তবে একি অদ্ভুত কাণ্ড সকাল হইতে ঘরিয়া ফিরিতেছি । এ-সব চোখের সামনে এমনই সম্পন্ট হইয়া দেখা দিল যে, তাহার সমস্ত দশ্চিন্তা একেবারো ধাইয়া মছিয়া গেল, সে কাদা ঠেলিয়া, মাঠ ভাঙ্গিয়া উদ্ধাশীবাসে ঘরের দিকে ছটিল । বেলা যখন যায়-যায়, পশ্চিমাকাশে সন্যদেব ক্ষণকালের জন্য মেঘের ফাঁকে রক্তমখ বাহির করিয়াছেন, সে তখন বাড়ি ঢুকিয়া সোজা রান্নাঘরে আসিয়া দাঁড়াইল । মেঝের উপর তখনও আসন পাতা, তখনও গতরাত্রির বাড়া ভাত শকাইয়া পড়িয়া আছে-আরশোলা ইন্দরে ছিটাছিটি করিতেছে-কেহ মন্ত করে নাই । সে ভোরের অাঁধারে ঠাহর করে নাই ; এখন ভাতের চেহারা দেখিয়াই বঝিল, ইহাই তুলসীর মোটা চাল, ইহাই অদ্ভুক্ত স্বামীর জন্য বিরাজ জ্বরে কপিতে কপিতে অন্ধকারে লাকাইয়া ভিক্ষা করিয়া আনিয়াছিল, ইহারই জন্যে সে মার খাইয়াছে, অশ্রাব্য কটু কথা শনিয়া লক্ষজায় ধিক্কারে বিষরি দর্যন্ত রাতে গহত্যাগ করিয়াছে। নীলাম্বর সেইখানে বসিয়া পড়িয়া দই হাতে মািখ ঢাকিয়া মেয়েমানষের মত গভীর আত নাদ করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। সে যখন এখনও ফিরিয়া আসে নাই, তখন আর আসিবার কথা ভাবিতে পারিল না । সে স্ত্রীকে চিনিত । সে যে কত অভিমানী, প্রাণ গেলেও সে যে পরের ঘরে আশ্ৰয় লইতে গিয়া এই কলঙ্ক প্রকাশ করিতে চাহিবে না, তাহা নিঃসংশয়ে বঝিতেছিল বলিয়াই তাহার বকের ভিতর এত সত্বর এমন হাহাকার উঠিল । তারপর উপড়ে হইয়া পড়িয়া দই বাহ সম্মখে প্রসারিত করিয়া দিয়া অবিশ্রাম আবত্তি করিতে লাগিল, এ আমি সইতে পারব না। বিরাজ তুই আয় । সন্ধ্যা হইল, এ বাড়িতে কেহ দীপ জ্বলিল না ; রান্ত্রি হইল, রান্নাঘরে কেহ। রধিতে প্রবেশ করিল না ; কাঁদিয়া কাদিয়া তাহার চোখ-মাখ ফুলিয়া গেল, কেহ