পাতা:বিরাজ বৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজবোঁ }ሃdኔ সারারাত্রি জাগিয়া কাটাইত, ঘাম পাইলে উঠিয়া গিয়া চোখোমখে জল দিয়া আবার নতন করিয়া ভাবিতে বসিত-হা ভগবান । তাহার সেই বিচিত্র ছবিটনকে কেন এমন করিয়া দই পায়ে মাড়াইয়া গড়াইয়া দিলে । সে তাহার সবামীর পায়ের উপর উপর হইয়া পড়িয়া কোন লােজায় আর এ-মাখ তুলিয়া তাঁহার মাখের পানে চাহিবে । ঘরে আর একজন রোগিণী ছিল, সে বিরাজের কান্না দেখিয়া উঠিয়া আসিয়া বিসময়ের সম্বরে প্রশ্ন করিল, কি হল গা ? কেন কাঁদচ ? সে বিরাজের কান্নার হেতু জানিতে চায় ! বিরাজ তাড়াতাড়ি চোখ মছিয়া বসিল এবং কোনদিকে না চাহিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল ! সেইদিন লোকপরিপািণ শব্দমােখর রাজপথের এক প্রান্ত বাহিয়া যখন সে তাহার অনভ্যস্ত ক্লান্ত চরণ দটিকে সারাজীবনের অনন্দ্ৰিন্ট যাত্রায় প্রথম পরিচালিত করিল, তখন বািক চিরিয়া একটা দীঘ বাস বাহির হইয়া আসিল । সে মনে মনে বলিল, ভগবান ! হয়ত ভালই করিয়াছ । আর কেহ চাহিয়া দেখিবে না-এই মািখ, এই চোখ, হয়ত এই যাত্রারই উপযক্তি। গ্রামের লোক জানিয়াছে, সে গািহত্যাগিনী কুলটা । তাই, যে মািখ তুলিয়া তাহার গ্রামের মািখ, তাহার স্বামীর মািখ দেখা নিষিদ্ধ হইয়া গিয়াছে, সে মািখ হয়ত এমন হওয়াই তোমার মঙ্গলের বিধান ! বিরজ পথ চলিতে লাগিল । ষোল কতদিন গত হইয়া গিয়াছে। প্রথমে সে দাসীবত্তি করিতে গিয়াছিল, কিন্তু তাহার ভগ্নদেহ অসমর্থ হইল-গহসহ বিদায় দিলেন । তখন হইতে ভিক্ষাই তাহার উপজীবিকা । সে পথে পথে ভিক্ষা করে, গাছতলায় রধিয়া খায়, গাছতলায় শোয় । এই বত মান জীবনে, তাহার অতীতের তিলমাত্র চিহ্নও আর বিদ্যমান নাই। তাহার শতাচ্ছিন্ন বস্ত্র, জাটবাঁধা রক্ষে একটুখানি চুল, মলিন ভিক্ষালব্ধ একখানি ছোট কাঁথা গায়ে । তাহার তেমনই দেহ, তেমনই বণ,-তেমনই সব । অথচ এই তাহার পাঁচশ বৎসর মাত্র বয়স, এই দেহেরই তুলনা একদিন সবগেও মিলিত না । অতীত হইতে ছিাড়িয়া আনিয়া ভগবান তাহাকে একেবারে নন্তন করিয়া গড়িয়া দিয়াছেন। সে নিজেও সব ভুলিয়াছে। শােধ ভুলিতে পারে নাই দটাে কথা। “দাও"। বলিতে এখনও তাহার মাখে রক্ত ছটিয়া আসে-আজও কথাটা গলা দিয়া সম্পন্ট বাহির করিতে পারে না। আর ভুলিতে পারে না যে, তাহাকে অনেক দন্তরে গিয়া মরিতে হইবে। মরণের সেই স্হানটুকু তাহার কোন দেশান্তরে তাহা সে জানে না বটে, কিন্তু