পাতা:বিরাজ বৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজবোঁ এটা জানে, তাহা বহন্দরে । সেই সদরের জন্যই সে অবিশ্রাম পথ চলিয়াছে। সে যে কোনমতেই এ দশা তাহার স্বামীর দণ্টিগোচর করিতে পরিবে না, এবং দোষ তাহার যত অপ্রমেয়ই হউক, এ অবস্হা চোখে দেখিলে তাঁহার যে বক ফাটিয়া যাইবে, তাহা এক মহত্যের তরেও বিস্মত হইতে পারে নাই বলিয়াই নিরস্তর দরে সরিয়া श्यारे,ऊठ्ठल । একটা বৎসর পথ হাঁটতেছে, কিন্তু কোথায় তাহার অপরিচিত গম্যাসহান ? কোথায় কোন ভূমিশয্যায়। এই লক্ষজাহত, তপ্ত মাথাটা পাতিয়া এই লাঞ্ছিত জীবনটা নিঃশব্দে শেষ করিতে পাইবে ? আজি দদিন হইতে সে একটা গাছতলায় পড়িয়া আছে - উঠিতে পারে নাই। আবার ধীরে ধীরে রোগ ঘিরিয়াছো-কাশি, জবার, বকে ব্যথা । দািবল দেহে শক্ত অসখে পডিয়া হাসপাতালে গিয়াছিল, ভাল হইতে না হইতেই এই পথশ্ৰম, অনশন ও অধশিন । তাহার বড় সবলদেহ ছিল বলিয়াই এখনও টিকিয়া আছে, আর বঝি থাকে না। আজ চোখ বজিয়া ভাবিতেছিল, এই বক্ষতলই কি ...সেই গাম্যস্থান ? ইহার জন্যই কি সে এত দেশ, এত পথ অবিশ্রাম হটিয়াছে ? আর কি সে উঠিবে না ? বেলা অবসান হইয়া গেল, গাছের সবেচ্চি চড়া হইতে অস্তোনমখ সমযের শেষ রক্তাভা কোথায় সরিয়া গেল, সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি গ্রামের ভিতর হইতে ভাসিয়া তাহার কানে পৌছিল, সেই সঙ্গে তাহার নিমীলিত চোখের সম্মখে অপরিচিত গহসােহবধাদের শান্ত মঙ্গল মতি গলি ফুটিয়া উঠিল। এখন কে কি করিাতেছে, কেমন করিয়া দীপ জলিতেছে, হাতে দীপ লইয়া কোথায় কোথায় দেখাইয়া ফিরিতেছে, এইবার গলায় অচিল দিয়া নমস্কার করিতেছে, তুলসীতলায় দীপ দিয়া কে কি কামনা ঠাকুরের পায়ে নিবেদন করিতেছে,-এ সমস্তই সে চোখে দেখিতে লাগিল, কানে শনিতে লাগিল। আজ অনেকদিন পরে তাহার চোখে জল আসিল । কত সহস্ৰ বৎসর যেন শেষ হইয়া গিয়াছে, সে কোন গহে সন্ধ্যাদীপ জবালিতে পায় নাই, কাহারও মখ মনে করিয়া ঠাকুরের পায়ে তাঁহার আয় ঐশ্ববর্য মাগিয়া লয় নাই। এসমস্ত চিন্তাকে সে প্রাণপণে সরাইয়া রাখিত, কিন্তু আজ আর পারিল না । শাঁখের আহবানে তাহার ক্ষধিত তৃষিত হৃদয় কোন নিষেধ না মানিয়া গহস্হবধাদের ভিতরে গিয়া দাঁড়াইল। তাহার মনশ্চক্ষে প্রতি ঘরদোর, প্রতি প্রাঙ্গণপ্রান্তর, বাঁধান তুলসীবেদী, প্রতি দ্বীপটি পর্যন্ত এক হইয়া গেল-এ যে সমস্তই তাহার চেনা ; সবগলিতেই এখন যে তাহারই হাতের চিহ্ন দেখা যাইতেছে! আর তাহার দঃখ রহিল না, সে তন্ময় হইয়া নিরস্তুর বধ্যদের অনসরণ করিয়া ফিরিতে লাগিল। যখন তাহারা রধিতে গেল, সঙ্গে গেল, রান্না শেষ করিয়া যখন স্বামীদের খাইতে দিল, সে চোখ মেলিয়া চাহিয়া দেখিল, তার পর সমস্ত কাজকম সমাধা করিয়া অনেক রাত্রে যখন তাহারা নিদ্ৰিত স্বামীদের শয্যাপাশে বা আসিয়া দাঁড়াইল, সেও কাছে দাঁড়াইতে গিয়া সহসা শিহরিয়া উঠিল-এ যে তাহারই স্বামী । আর তাহার চোখের পলক পড়িল না,