পাতা:বিরাজ বৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজবোঁ ܡܠܬ কাঁদিয়া বলিল, যেখানে ইচ্ছা চল দাদা, কিন্তু আমি তোমাকে একটি দিনও কোথাও একলা ছেড়ে দেব না । নীলাম্বর মািখ তুলিয়া একটি খানি হাসিল । বিরাজ জগন্নাথের পথ ফিরিয়া আসিতেছিল। এই পথ ধরিয়া যখন সে অনন্দিন্ট মৃত্যুশয্যার অন্যাসন্ধানে গিয়াছিল, সেই যাওয়ায় আর এই আসায় কি প্রভেদ । এখন সে বাড়ি যাইতেছে। তাহার দািবল দেহ পথে যতই সকাতরে বিশ্রাম-ভিক্ষা চাহিতে লাগিল, সে ততই ক্লািন্ধ ও বিরক্ত হইয়া উঠিতে লাগিল। কোন কারণে কোথাও বিলম্ব করিতে সে সম্মত নয়। তাহার কাশি যক্ষমায় পরিণত হইয়াছে ইহা সে টের পাইয়াছিল, তাই আশঙ্কার অবধি ছিল না, পাছে যাওয়া না ঘটে। ছেলেবেলা হইতে একটা বিশবাস তাহার বড় দঢ় ছিল, দেহ নিৰ্ভপাপ না হইলে কেহ স্বামীর পায়ে মরিতে পায় না। সে এই উপায়ে মরণের পতবে একবার নিজের দেহটাকে যাচাই করিয়া লইতে চায়--তাহার প্রায়শ্চিত্ত সক্ষপণ হইয়াছে কি না। এই পরীক্ষায় উত্তীৰ্ণ হইতে পারিলে সে নিভয়ে, মহানন্দে জীবনের পরপারে দাঁড়াইয়া তাঁর জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিবে । কিন্তু দামোদরের এধারে আসিয়া তাহার হাত-পা ফুলিয়া উঠিল, মািখ দিয়া অধিক পরিমাণে রক্ত পড়িতে লাগিল-আর কিছুতেই পা চলিল না । সে হতাশ হইয়া একটা গাছতলায় ফিরিয়া আসিয়া ভয়ে কাঁদিতে লাগিল । এ কি ভয়ানক অপরাধ যে, এত করিয়াও তাহার শেষ আশা মিটিল না । তাহার এ জন্ম গেল, পরজন্মেও আশা নাই, তবে সে আর কি কৱিবে । আশা নাই, তবও সে গাছতলায় পড়িয়া সারাদিন হাত জোড় করিয়া সবামীর পায়ে মিনতি জানাইতে जाीिल । পরদিন তারকেশবরের কাছাকাছি কোথায় হাটবার ছিল। প্রভাত হইতে সেই পথে গরুর গাড়ি চলিতে লাগিল। সে সাহসে ভর করিয়া এক বন্ধ গাড়োয়ানকে আবেদন করিল । বড়ো মানষে তাহার কান্না দেখিয়া, সক্ষমত হইয়া তাহাকে গাড়ি করিয়া তারকেশবরে পৌছাইয়া দিয়া গেল। বিরাজ স্থির করিল, এই মন্দিরের আশেপাশে কোথাও পড়িয়া থাকিবে । এখানে কত লোক আসে যায়, যদি কোন উপায়ে একবার ছোটবেীর কাছে সংবাদ পাঠাইতে পারে ?